ফেসবুকের হিসেবে ১৩ ঘণ্টা আগে তিনি এক কার্টুন পোষ্ট করেছেন। যে কার্টুনে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। যে কার্টুনে ‘ধরাশায়ী বাম’-এর ছবি দেখানো হয়েছে। এক ‘বাম’ দলের নেতার ফেসবুকে ওয়ালে এই কার্টুন পোস্ট করা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্কের ঝড় বইছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের ওই পোষ্টের উত্তরে উর্বা চৌধুরী লিখেছেন – “যে ১২টা সিটে প্রার্থী দিয়েছিল লিবারেশন এবং মানুষের দ্বারা বিধ্বস্তের মতো করে প্রত্যাখ্যাত হল - তার কোনো "ঐতিহাসিক ভুল" গোত্রীয় পর্যালোচনা থাকলে কেউ দেবেন প্লিজ - পড়ব। পার্টি হিসাবে আত্মবিপন্নতার কোনো বোধ আদৌ কাজ করছে কি না ওঁদের মাথার ভিতর - জানতে চাই।”
শ্রীকান্ত মণ্ডল লিখেছেন – “ছবিতে দেখা যাচ্ছে লাল জার্সি গড়াগড়ি খাচ্ছে এদিকে দীপুদা আনন্দে লাফালাফি করছে। কী বামপন্থী রে বাবা!”
তারক দেবনাথ লিখেছেন – “নারদ চোরেদের হয়ে ওকালতিতে চোরেদের অফিসিয়াল দলকেও ছাপিয়ে গিয়েছে লিবেরালরা।”
প্রমিত সাহা লিখেছেন - নিজের পার্টিকে কমিউনিস্ট পার্টি বলে দাবী করা সহজ, হয়ে ওঠা যে সবার দ্বারা হয়না সেটা আপনাকে দেখেই বোঝা যায়। নিজে কাপ পাননি তাতে দুঃখ নেই, তৃণমূলের কাপ পাওয়া নিয়ে আনন্দের শেষ নেই।”
প্রসঙ্গত, রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই দলের ‘নো ভোট টু বিজেপি’ প্রচার ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছিলো বাম মহলে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ‘নো ভোট টু বিজেপি’ ঘিরে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে বাম সমর্থকরা। রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে সংযুক্ত মোর্চা যেমন একটি আসনেও জয়ী হয়নি তেমনই সংযুক্ত মোর্চার বাইরে থেকে ১২টি আসনে আলাদা লড়াই করে শূন্য হাতেই ফিরতে হয়েছে সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-কে।
এই বিপর্যয়ের পরেও কটাক্ষ ধেয়ে আসে লিবারেশন শিবির থেকে। যা নিয়ে সিপিআই(এম)-এর সঙ্গে সম্পর্ক যথেষ্টই তিক্ত হয় লিবারেশনের। যা এখনও থামেনি। এই বিতর্কের মাঝেই এবার তৃণমূলের মন্ত্রী বিধায়কদের গ্রেপ্তারিতে সরাসরি তৃণমূলের পাশে দাঁড়ালো ওই দল। মঙ্গলবার রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এই গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখানো হয় সিপিআইএমএল(লিবারেশন)-এর পক্ষে।
গতকাল নারদ কান্ডে তৃণমূলের মন্ত্রী বিধায়করা সিবিআই-এর হাতে গ্রেপ্তারের পর সিপিআই(এম)-এর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন – “করোনা মহামারীতে যখন সারা দেশের মানুষের জীবন, জীবিকা অভূতপূর্ব বিপর্যয়ের সম্মুখীন, তখনই সরকারের সীমাহীন অপদার্থতা চাপা দিতে মানুষের নজর অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্যই এই সময়টা বেছে নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
গতকাল রাতেই আলাদা বিবৃতি দেয় লিবারেশন এবং মঙ্গলবার রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখায়। লিবারেশনের বিবৃতিতে তৃণমূলের সুরে সুর মিলিয়ে ঘটনাটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা আখ্যা দিয়ে বলা হয় – “রাজ্য দখলে বিজেপির চরম ব্যর্থতা ও হতাশা আড়াল করতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বিজেপি-আরএসএস। সেই জন্য সিবিআই লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরোটাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।”
যদিও লিবারেশনের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানো নিয়ে সিপিআই(এম)-এর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি কিন্তু এদিনের ঘটনার পরে দুই পক্ষের সম্পর্কে আরও অবনতি ঘটবে বলেই অভিমত রাজনৈতিক মহলের।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন