ফের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরভোটে দলের প্রার্থীতালিকায় বেশ কিছু বদল আনা হয়েছে। নয়া তালিকা ইতিমধ্যেই জেলা সভাপতিদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১০৮ পুরসভার সেই তালিকায় চূড়ান্ত সীলমোহর দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে বিস্তর বদল আনা না হলেও প্রায় আগের তালিকার সঙ্গে ২০ শতাংশ পার্থক্য রয়েছে। নতুন তালিকায় সই করেছেন সুব্রত বক্সি ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এদিকে এদিন দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রথম প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। কিন্তু কিছু মত পার্থক্য থাকায় পুনরায় বৈঠকে বসেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এর পরেই রাতে ফের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে তৃণমূল কংগ্রেস।
আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের বকেয়া ১০৮টি পুরসভার নির্বাচন। গতকালের সাংবাদিক বৈঠকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি সুব্রত বক্সি রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ফিরহাদ হাকিম প্রমুখ।
তবে এবারের পুরভোট তৃণমূলের বড় চমক প্রার্থী তালিকায় কোনো বিধায়ক নেই। নতুন ও পুরনোর সমন্বয়ে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যদিও দার্জিলিংয়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। সেখানে স্থানীয় সহযোগী দলের সঙ্গে আলোচনার পরেই প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। এছাড়াও আরো কিছু ওয়ার্ডের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়নি আলোচনার সাপেক্ষে।
১০৮ পুরভোটেও প্রায় কলকাতা মডেল। প্রার্থী তালিকায় নতুন পুরনোর সংমিশ্রণ। এদিন কমপক্ষে ৩০০০ প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করা হয়। সবটাই চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে কলকাতা পুরভোটে মেয়র নির্বাচনের দিন মঞ্চ থেকেই মমতা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, অভিজ্ঞতা ছাড়া পুরসভা চালানো যায় না। তাই নতুনদের স্বাগত জানানোর পাশপাশি প্রবীণদের ওপরেও আস্থা রাখছেন নেত্রী। এছাড়াও যেসব আসনে মহিলা তপশিলি জাতি উপজাতি সংরক্ষণ রাখা হয়েছিল গত বার সেই সব আসনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদেরকে বহাল রাখা হয়েছে।
তবে কলকাতা পুরভোটের প্রার্থীতালিকায় 'এক ব্যক্তি, এক পদ' নীতি পরিলক্ষিত না হলেও বকেয়া পুরভোট সেই নীতিতে জোর দিয়েছে তৃণমূল। কলকাতা পুরভোটে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকেও টিকিট দেওয়া হয়েছিল। সেসব জটিলতা এড়াতেই কোনও বিধায়ক এবং পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে টিকিট দেওয়া হয়নি এমনটাই জানা গিয়েছিল। কিন্তু প্রার্থিতালিকায় ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি এবং পরিবারতন্ত্রে রাশ টানার বিষয়টিতে বেশ কিছু ব্যতিক্রম দেখা যায়।
তালিকায় মহেশতলা পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী করা হয়েছে মহেশতলার বিধায়ক দুলাল দাসকে। প্রসঙ্গত, এর আগে দুলাল ওই পুরসভারই ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়াতেন। এ বার তাঁকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বীরভূমের বোলপুর পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে রাজ্যের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বস্ত্রশিল্প দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের স্ত্রী কুন্তলা সিংহকে। গত পুরভোটেও প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। আবার রামপুরহাট পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে দম্পতি সৌমেন ভগৎ এবং মীনাক্ষী ভগৎ-কে। যা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। তাই পুনরায় প্রার্থী তালিকা বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের।
এর আগেই নেতাজি ইন্ডোর এর সাংগঠনিক নির্বাচনের দিন দলীয় নেতাকর্মীদের সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলে গোষ্ঠীর কোন জায়গা নেই একটাই গ্রুপ তৃণমূল। গতকালের সাংবাদিক বৈঠকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গলাতেও একই সুর শোনা গেছে। কোনও প্ররোচনায় পা না দেওয়ার কথাই আরও একবার দলীয় নেতা-কর্মীদের মনে করিয়েও দেন তিনি। হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, 'সবাইকে টিকিট দেওয়া সম্ভব নয়। ক্লাসে একজনই প্রথম হয়। সবাই হয় না। তাই সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। যাঁরা টিকিট পাননি, তাঁদের মনখারাপ হবে। তবে এমন কিছু করবেন না, যাতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।'
উল্লেখ্য, প্রার্থীতালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য টিকিট না পাওয়া বিক্ষোভ দেখান তাঁর সমর্থকেরা। কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গিয়েছে অশোকনগর কল্যাণগড় পুরসভার ১৩ ওয়ার্ডের প্রার্থী নিয়েও। বহরমপুর পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী অপছন্দ হওয়ায় বহরমপুর জেলা তৃণমূলের কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখান কর্মীরা। প্রার্থী ঘোষণার পর সন্ধ্যা থেকেই মালবাজার শহরের সত্যনারায়ন মোড়ে পার্টি অফিসের সামনে জাতীয় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করেন তৃণমূলের কর্মীরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন