কোভিড জনিত কারণে লকডাউনের সময় ভারত এবং বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে মহিলাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছিলো বিষণ্ণতা, হতাশা এবং উদ্বেগ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নেতৃত্বে করা এক গবেষণায় চাঞ্চল্যকর এই তথ্য উঠে এসেছে। জার্নাল অফ ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের আগামী সংখ্যায় এই সংক্রান্ত ফলাফল প্রকাশিত হতে চলেছে। গবেষণার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ৩৮ শতাংশ মহিলার বিষণ্ণতা বেড়েছে, উদ্বেগ বেড়েছে ৪৪ শতাংশ মহিলার এবং ক্লান্তি বেড়েছে ৭৩ শতাংশ মহিলার।
এই গবেষণায় দেখা গেছে, যে মহিলাদের সামাজিক অবস্থান তাদের আরও দুর্বল করে তুলতে পারে - যাদের কন্যাসন্তান রয়েছে এবং যারা মহিলা প্রধান পরিবারে থাকেন – তারা লকডাউনের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আরও বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
এই গবেষক দল উত্তর ভারতের ছ’টি রাজ্যে এই সমীক্ষা চালিয়েছে। যার মধ্যে আছে রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্র। মোট ১,৫৪৫টি পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনিক কথোপকথন চালানো হয়েছে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে। যে সময় ভারতে প্রথম কোভিড-১৯ ঢেউ চরম উচ্চতার কাছাকাছি ছিলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ গ্লোবাল পলিসি অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজির অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক গৌরব খান্না জানিয়েছেন, "বাড়ির বাইরে কাজের সুযোগ এবং সামাজিকীকরণের সুযোগ না থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর হতে পারে।"
কোভিড মহামারীর ফলে মহিলাদের আয়ের চূড়ান্ত ক্ষতি হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাধারণ সময়ের তুলনায় লকডাউনের সময় প্রায় ২৫ শতাংশ পরিবার খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এগুলো প্রাথমিকভাবে মহিলাদের প্রভাবিত করেছে। কারণ, উন্নয়নশীল বিশ্বের বহু অঞ্চলে এখনও যখন খাদ্যের অভাব হয় তখন প্রথম মহিলাদের খাদ্য গ্রহণ কমে যায়।
খান্না আরও জানিয়েছেন, "আমরা আমাদের গবেষণায় দেখেছি, লকডাউন নীতির পরিণতি মহিলাদের জন্য আরও ভয়ঙ্কর হয়েছে৷ আমরা আশা করি উন্নয়নশীল দেশগুলির নীতিনির্ধারকরা এই নীতিগুলির প্রভাব কী তা জানেন। বিশেষ করে যারা সমাজের দুর্বল অবস্থানে আছেন তাঁরা যদি আবার এইধরণের লকডাউনের মুখোমুখি হন আবারও চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
এই সমীক্ষায় বেশ কিছু নীতিগত সুপারিশের রূপরেখাও তুলে ধরা হয়েছে। যা মহামারী চলাকালীন মহিলাদের দ্বারা অভিজ্ঞ মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের পরিণতিগুলি মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ভারতের কিছু অংশে, সরকার গ্রামীণ এলাকায় খাদ্য বিতরণ করেছে, যা অপুষ্টি এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা প্রতিরোধে সাহায্য করেছে। ফোনে দেওয়া পরামর্শ এবং হেল্পলাইন পরিষেবাগুলি মহামারীর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাবগুলির মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে বলে লেখক উল্লেখ করেছেন।
খান্না আরও বলেন, "আমাদের অনুমান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ করে মহিলাদের এবং মায়েদের উপর লকডাউনের প্রভাব পড়েছে।" তাঁর মতে, "যখন বাচ্চারা স্কুলে বা ডে কেয়ার সেন্টারে থাকে না, তখন শিশু যত্নের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগত লিঙ্গ ভূমিকার কারণে সেই বোঝা সাধারণত মহিলাদের উপর পড়ে। নীতিনির্ধারকদের এই সত্যটি সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত যে এই নীতিগুলির দ্বারা মহিলারা ভিন্নভাবে প্রভাবিত হবেন।"
- with Agency Inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন