কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়া জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া কী দ্রুত তাঁর নিজের খাসতালুকে জমি হারাচ্ছেন? নির্বাচনমুখী মধ্যপ্রদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি সেইরকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে অনুমান রাজনৈতিক মহলের।
মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার জন্য দল বদল করছেন। যে দলবদলের রাজনীতিতে সাম্প্রতিক সংযোজন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ঘনিষ্ঠ বৈজনাথ সিং যাদবের দলত্যাগ।
বুধবার সিন্ধিয়া ঘনিষ্ঠ এবং সিন্ধিয়ার খাসতালুকের এই নেতা বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। এদিনের যোগদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মধ্যপ্রদেশের দুই প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা কমলনাথ ও দিগ্বিজয় সিং।
২০২০ সালে মধ্যপ্রদেশে কমলনাথের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের পতনের আগে বৈজনাথ সিং যাদব কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। ওইসময় প্রথম দফায় ২২ জন এবং পরে ৪ জন কংগ্রেস বিধায়ক জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার সঙ্গে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। ফলস্বরূপ কংগ্রেস সরকারের পতন ঘটে।
মধ্যপ্রদেশের রাজনৈতিক মহলের সাম্প্রতিক গুঞ্জন অনুসারে, রাজ্য বিজেপির অনেক নেতাই বিজেপিতে নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত মনে করছেন না। এই তালিকায় একাধিক সিন্ধিয়া অনুগামীও আছেন। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এবার কড়া প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মুখে পড়তে চলেছে।
এই পরিস্থিতিতে অধিকাংশ সিন্ধিয়া অনুগতর রাজনৈতিক ভবিষ্যত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বিজেপি নেতৃত্ব স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সমীক্ষার ভিত্তিতে এবং প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
২০২০ সালে মধ্যপ্রদেশে অপারেশান লোটাসের সময় যে সব কংগ্রেস বিধায়ক দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৭ জন পরবর্তী উপনির্বাচনে পরাজিত হন। এঁরা হলেন, ইমারতি দেবী, রঘুরাজ সিং কাসানা, গিরিরাজ ডান্ডোটিয়া, আদাল সিং কাসানা, রণবীর জাটাভ, মুন্নালাল গয়াল এবং জাসমন্ত জাটাভ।
মূলত সিন্ধিয়ার বিদ্রোহের কারণে কমলনাথের সরকারের পতন এবং শিবরাজ সিং চৌহানের নেতৃত্বে বিজেপি সরকারের ফিরে আসার পর সিন্ধিয়া গোষ্ঠীর ১২ জনকে ক্যাবিনেট মন্ত্রী করা হয়। এঁরা হলেন - তুলসী সিলাওয়াত, গোবিন্দ সিং রাজপুত, মহেন্দ্র সিং সিসোদিয়া, প্রভুরাম চৌধুরী, প্রদ্যুম্ন সিং তোমর, বিসাহুলাল সিং, হরদীপ সিং ডাং, রাজবর্ধন সিং, ওপিএস ভাদোরিয়া এবং ব্রজেন্দ্র সিং যাদব।
বর্তমানে, মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আর মাত্র পাঁচ মাস বাকি, এবং শিবরাজ চৌহানের নেতৃত্বাধীন সরকার তার প্রায় দুই দশকের শাসনের জন্য কড়া প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মুখোমুখি হতে চলেছে। অন্যদিকে রাজ্যের বিভিন্ন কেন্দ্রে বিজেপির পুরোনো এবং নতুন-দের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দল ক্রমশ বাড়ছে। যে কোনো মূল্যে বিজেপি নেতৃত্ব আপাতত সেই বিরোধ দূর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রাজ্যের এই রাজনৈতিক আবহে বৈজনাথ সিং যাদব কংগ্রেসে ফিরে আসা গেরুয়া শিবিরে জোর ধাক্কা দিয়েছে। সিন্ধিয়ার অত্যন্ত কাছের মানুষের দলত্যাগ এবং তিনি সিন্ধিয়ার ঘাঁটি শিবপুরী থেকে আসার কারণে বিজেপি শিবিরে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে।
শীর্ষ রাজ্য কংগ্রেস নেতারা বৈজনাথ যাদবকে দলে স্বাগত জানিয়েছেন এবং রাজ্য রাজনৈতিক মহল এই ঘটনাকে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার নিজের গড়ে দ্রুত জমি হারানো হিসেবে দেখছে।
- with inputs from IANS
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন