২০২৩-এর শেষের দিকে মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা। রাজনৈতিক মহলের মতে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে এবারের মধ্যপ্রদেশ নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে। রাজনৈতিক ভাবে যে লড়াইয়ের ময়দানে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে কংগ্রেস ও বিজেপি। বিগত নির্বাচনে মানুষের রাজ্যে কংগ্রেস জয়ী হলেও অপারেশান লোটাসের ধাক্কায় সেই সরকার ধরে রাখতে পারেনি। ১৫ মাসের মধ্যে কমলনাথের সরকার ফেলে দিয়ে ক্ষমতাসীন হয় বিজেপি।
আসন্ন মধ্যপ্রদেশ নির্বাচনে একদিকে কংগ্রেস যেমন প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার কথা তুলে ধরতে চাইছে অন্যদিকে বিজেপি ‘মোদী ম্যাজিক’-এ ভরসা রেখে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে চলেছে। প্রায় দীর্ঘ দু’দশক বিজেপির শাসনে থাকা মধ্যপ্রদেশে (কমলনাথের ১৫মাসের শাসনকাল বাদ দিয়ে) প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার কথা অবশ্য মানতে নারাজ বিজেপি। যদিও এখন থেকেই তৃণমূল স্তরে প্রচার শুরু করে দিয়েছে বিজেপি।
অন্যদিকে কংগ্রেস আসন্ন নির্বাচনে বেশি করে সাধারণ মানুষের দাবিদাওয়া তুলে আনতে চাইছে। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে কংগ্রেস তত এইসব ইস্যুতে একটু একটু করে সুর চড়াচ্ছে। নির্বাচনী ইস্তাহারে রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরতে চাইছে কংগ্রেস।
রাজ্যের বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা এবং নির্বাচনী ইস্তাহার কমিটির প্রধান রাজেন্দ্র কুমার সিং এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ শতাংশ ভোট হারাবে। কারণ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের জনপ্রিয়তার পারদ ক্রমশ নামছে। যার ফলে লাভবান হবে কংগ্রেস।
সিং সংবাদসংস্থা আইএএনএস-কে জানিয়েছেন, শিবরাজ সিং চৌহানের জনপ্রিয়তা কমার কথা স্বীকার করছে বিজেপিও। ২০১৮ সালে বিজেপি কংগ্রেসের থেকে ০.৬ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছিল। যদিও মোট আসনের নিরিখে বিজেপি কংগ্রেসের চেয়ে ৫টি আসন কম পেয়েছিল। কিন্তু এবার ভোটের ছবি সম্পূর্ণ আলাদা হতে চলেছে। এবার কংগ্রেস বিজেপির থেকে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ শতাংশ ভোট বেশি পাবে।
২০১৮ সালের রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে মোট ২৩০ আসনের মধ্যে কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল ১১৪ আসনে। বিজেপি জয়ী হয় ১০৯ আসনে। সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থীরা ২ এবং ১টি আসনে জয়ী হয়। নির্দল প্রার্থীরা জেতেন ৪ আসনে।
সেবার বিজেপি পায় ৪১.০২ ভোট এবং কংগ্রেস পেয়েছিল ৪০.৮৯ শতাংশ ভোট। যদিও এই বিষয়ে কংগ্রেসের দাবি সেবার তারা ২২৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। তাই ঠিকভাবে হিসেব করলে এই ভোটের হার অন্য হবে।
শিবনাথ সিং চৌহানের জনপ্রিয়তা হ্রাস প্রসঙ্গে সিং জানান, গত আড়াই তিন বছরে শিবরাজ সিং চৌহান এমন কোনো কাজ করেননই যাতে তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। উল্টে তিনি ক্রমশ ক্রমশ নরেন্দ্র মোদীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এই মুহূর্তে যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা দ্রুত কমছে তাই শিবরাজ সিং চৌহানের জনপ্রিয়তাও কমতে বাধ্য।
কংগ্রেসের পাশাপাশি রাজ্যের মানুষের মন থেকে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ছাপ পুরোপুরি মুছে ফেলতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ওপরেই নির্ভর করছে।
মধ্যপ্রদেশের এক প্রবীণ বিজেপি নেতা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা অবশ্যই একটি ফ্যাক্টর হবে, কিন্তু নির্বাচনে শুধুমাত্র একটি ফ্যাক্টর দিয়ে লড়াই করা হয় না। নেতৃত্বের গুণমান আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি ফ্যাক্টর যা নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে... প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিজেপির ক্যারিশম্যাটিক নেতা - - নির্বাচন আসতে দিন, তারপরই বিষয়গুলি পরিষ্কার হবে।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন