নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে মধ্যপ্রদেশের নবনির্বাচিত বিজেপি সরকার ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে চলেছে। আগামী ২৭ ডিসেম্বরই মধ্যপ্রদেশ সরকারের রাজকোষে বিশাল অঙ্কের এই ঋণ জমা হবে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যেই মোহন যাদবের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের অর্থ দপ্তর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে এই ঋণের আবেদন জানিয়েছে।
এবারের ২ হাজার কোটি টাকা ঋণের পর মধ্যপ্রদেশ সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে সাড়ে ৩.৫ লক্ষ কোটি ছাড়াবে। যা মধ্যপ্রদেশ সরকারের ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের প্রস্তাবিত বাজেট ৩.১৪ কোটি টাকার চেয়েও বেশি।
মধ্যপ্রদেশ সরকারের নতুন নেওয়া এই ঋণের পর আর্থিক বছরের শেষে রাজ্যের মানুষের মাথাপিছু ঋণের বোঝা ৪৭ হাজার টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
শেষ পাঁচ বছরে মধ্যপ্রদেশ সরকারের ঋণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে যে ঋণ ছিল ১.৯৪ লক্ষ কোটি টাকা শেষ পাঁচ বছরে তা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে। এবারের ২ হাজার কোটি টাকা ঋণের আগে বর্তমান বছরের জানুয়ারি থেকে মধ্যপ্রদেশ সরকার ঋণ নিয়েছে প্রায় ৩৯,৫০০ কোটি টাকা। যার মধ্যে বর্তমান আর্থিক বছরে ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে ৩১ মার্চ ২০২৩-এ মধ্যপ্রদেশ সরকারের ঋণ যেখানে ছিল ৩.৩২ কোটি টাকা এবং বর্তমানে যা ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকা বর্তমান আর্থিক বছরের শেষে সেই ঋণ গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ৩.৮৫ লক্ষ কোটি টাকায়।
জানা গেছে, রাজ্যের পূর্বতন বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের ঘোষিত ‘লাডলি বহেনা’ প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকারের প্রতিমাসে খরচ ১,৬০০ কোটি টাকা। যেখানে ১.৩১ কোটি মহিলাকে প্রতি মাসে ১,২৫০ টাকা করে দেওয়া হয়।
মধ্যপ্রদেশের নব নির্বাচিত বিজেপি সরকারের ঋণ গ্রহণের কড়া সমালোচনা করেছে কংগ্রেস। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের উমং সিংহার এক এক্স বার্তায় জানান – ডবল ইঞ্জিন সরকারের অগ্রগতি দেখুন। এরা দেশের ওপর ২০৫ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ চাপিয়েছে। রাজ্যের ঋণ ৩.৫০ লক্ষ কোটিতে নিয়ে গেছে। দেশের প্রতি মানুষের মাথায় এখন ১.৪০ লক্ষ টাকার দেনা। রাজ্যের প্রতি মানুষের ওপর ৪৭ হাজার টাকার দেনা। ঋণের অঙ্ক আকাশ ছুঁয়েছে। দেশে দারিদ্র্য বাড়ছে। বিজেপির স্তাবকদের এইদিকেও নজর দেওয়া উচিত।
প্রসঙ্গত, বর্তমান বছরের জুলাই মাসের তথ্য অনুসারে ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে যে পাঁচ রাজ্য সবথেকে বেশি ঋণ নিয়েছে সেই তালিকায় আছে তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ এবং রাজস্থান।
রাজ্যভিত্তিক হিসাবে তামিলনাড়ুর ঋণ ৭,৫৩,৮৬০ কোটি টাকা (২০২১-২২-এ ৬,৫৬,৬২৬ কোটি টাকা)। উত্তরপ্রদেশের ৭,১০,২১০ কোটি টাকা (২০২১-২২-এ ৬,৫৬,৬২৬ কোটি টাকা)। মহারাষ্ট্রের ৬,৮০,৩৫৭ কোটি টাকা (২০২১-২২-এ ৫,৯৬,৬৮৯ কোটি টাকা)। পশ্চিমবঙ্গের ৬,০৮,৩১৩ কোটি টাকা (২০২১-২২-এ ৫,৫০,৭০৮ কোটি টাকা)। রাজস্থানের ৫,৩৭,০১৩ কোটি টাকা (২০২১-২২-এ ৪,৫৮,০৮৯ কোটি টাকা)। কর্ণাটকের ৫,৩৫,১৫৭ কোটি টাকা (২০২১-২২-এ ৪,৭৩,৪৩৮ কোটি টাকা)।
এছাড়াও ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে অন্ধ্রপ্রদেশের ঋণ ৪,৪২,৪৪২ কোটি টাকা, গুজরাটের ৪,২৩,৭১১ কোটি টাকা, কেরালার ৩,৯০,৮৬০ কোটি টাকা, তেলেঙ্গানার ৩,৬৬,৩০৬ কোটি টাকা, পাঞ্জাবের ৩,০৫,০৪৭ কোটি টাকা এবং হরিয়ানার ২,৮৭,২৬৬ কোটি টাকা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন