জুলাই মাসে সাম্প্রদায়িক হিংসার আগুন জ্বলে উঠেছিল হরিয়ানার নুহ-তে। সম্প্রীতির বার্তা দিতে এবার সেখানে বাজতে চলেছে দুর্গাপুজোর ঢাক। সম্প্রতি হরিয়ানার সোহনা অঞ্চলে বসবাসকারী বাঙালি পরিবারগুলি সম্মিলিতভাবে গঠন করেছে আরাবলী বেঙ্গলি কালচারাল সোসাইটি। সেই সংগঠনের প্রথম দুর্গাপুজোর মণ্ডপের জন্য জায়গা দিয়েছে সোহনার একটি আবাসন কর্তৃপক্ষ - সেন্ট্রাল পার্ক ফ্লাওয়ার ভ্যালি। বাঙালিরা উদ্যোগ নিলেও অন্যান্য ধর্মের মানুষরাও পুজার আয়োজনে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিয়েছে।
দুর্গোপুজোর ঠিক আগেই এক হয়েছে সোহনার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৪০টি বাঙালি পরিবার। এই পরিবারগুলি মিলিতভাবে তৈরি করেছে আরাবলী বেঙ্গলি কালচারাল সোসাইটি সংগঠন। সেই সংগঠন সূত্রেই খবর, দুর্গাপুজোর প্রত্যেকদিনই ধুনুচি নাচ থেকে শুরু করে ভাংড়া সহ সবধরণের নাচ অনুষ্ঠিত হবে। এবং গুজরাতি নৃত্য ‘ডান্ডিয়া’র মাধ্যমে শেষ হবে এই অনুষ্ঠানসূচী। 'সিঁদুর খেলা'রও আয়োজন রয়েছে।
বাঙালি ছাড়াও ওই পুজোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বহু অবাঙালিও। যেমন, জন্মসূত্রে কাশ্মিরি ও বর্তমানে সোহনার বাসিন্দা হীনা নিসাত মণ্ডপের সাজসজ্জার দায়িত্ব নিয়েছেন। পুজা নিয়ে উৎসাহ প্রকাশ করে তিনি জানিয়েছেন, “সমাজের সব স্তরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই পরিকল্পনা। নুহতে যা ঘটেছে, সেটা ভবিষ্যতে আর হওয়া উচিত নয়। আমরা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এমনিতেই পরস্পরের সংস্কৃতিকে সমানভাবে গ্রহণ করেছি। সেই কারণেই আমরা এই সংগঠনটি তৈরি করেছি। ভবিষ্যতেও এই একই উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসব পালন করতে চাই।”
অন্যদিকে, পুজোয় অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি সোহনার এক শাড়ি বিক্রেতা আফসানা পুজোর নাচেও অংশগ্রহণ করার উৎসাহ প্রকাশ করেছেন। দুর্গাপুজোর সময় বাঙালিদের ঐতিহ্যবাহী ধুনুচি নাচে অংশগ্রহণ করবেন তিনি। এক সংবাদসংস্থাকে এই বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, “সাধারণত, আবাসিক কর্তৃপক্ষগুলি যে উৎসবের আয়োজন করেন, সেখানে বহিরাগতদের জন্য কোনও জায়গা থাকে না। তাই এখানে মণ্ডপের জন্যই শুধুমাত্র ওই আবাসনের জায়গা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আসলে এটি একটি নন-সোসাইটি অনুষ্ঠান। তাই বাকি অনুষ্ঠানে যে কেউ যোগ দিতে পারেন।”
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য 'শ্যামা' উপস্থাপন করবেন তাঁরা। একদিন স্বামী শতমানন্দের নেতৃত্বে রামকৃষ্ণ মিশনের একটি দলের প্রোগ্রাম রয়েছে, যেখানে তাঁরা আধ্যাত্মিক জীবনের উপর বক্তৃতাও দেবেন।
গত ৩১ জুলাই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর একটি মিছিলকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় নুহতে। যা পরে গুরুগ্রামের কিছু অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে দুই হোম গার্ড এবং একজন ধর্মগুরু সহ ছয়জনের মৃত্যু হয়। আহত হন বহু। একাধিক ঘর, দোকান, গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন