প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী, যিনি রাজ্যের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় রাজনীতি থেকেও প্রায় সরে গিয়েছিলেন, বর্তমানে মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন এবং আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে রাজনৈতিক মহলে ফিরে আসার জন্য সমস্তরকম চেষ্টা করছেন৷
একসময়ের প্রথমসারির হিন্দুত্ববাদী নেতা এর আগে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি। সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন, তাঁরই নেতৃত্বে বিজেপি ২০০৩ সালে দিগ্বিজয় সিং নেতৃত্বাধীন ১০ বছরের কংগ্রেস সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
যদিও বিগত ২০ বছরে মধ্যপ্রদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি বিজেপির কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতৃত্বেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
আসন্ন মধ্যপ্রদেশ নির্বাচনের দিকে নজর রেখে উমা ভারতী রাজ্য বিজেপির উপর ক্রমশ চাপ তৈরি করতে শুরু করেছেন। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের আবগারি নীতির বিরুদ্ধে তিনি প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন এবং সমর্থকদের সাথে নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তাতেও নেমেছিলেন।
বিজেপির বিরুদ্ধে উমা ভারতীর ক্ষুব্ধ হবার মূল কারণ তাঁর অনুগত প্রীতম লোধিকে দল বিরোধী কার্যকলাপের কারণে বিজেপির প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে সরিয়ে দেওয়া; যদিও পরবর্তী সময়ে প্রীতম লোধিকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে মনোনয়নও দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও সাম্প্রতিক মহিলা সংরক্ষণ বিলের মধ্যে ওবিসি মহিলাদের জন্য একটি আলাদা কোটা তৈরির জন্যও বিজেপি নেতৃত্বের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন উমা ভারতী। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তিনি একটি ফ্রন্টও খুলেছেন।
সম্প্রতি মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে উমা ভারতীর ক্ষোভের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, কেউ কেউ 'মহিলা সংরক্ষণ বিল' নিয়ে নিজেদের সুবিধার জন্য মহিলাদের বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। উমা ভারতীর কার্যকলাপ বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব যে ভালোভাবে দেখছে না তা প্রধানমন্ত্রীর কথাতেই স্পষ্ট।
যদিও, ভোপালে শেষ সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদির মন্তব্যটি মূলত কংগ্রেস এবং বিশেষ করে গান্ধী পরিবারকে লক্ষ্য করে, তবে তিনি বিজেপির মধ্যে ওবিসি কোটার জন্য যারা তাদের আওয়াজ তুলেছেন তাদের সবাইকে একটি পরোক্ষ বার্তাও দিয়েছিলেন।
বক্তৃতার সময়, মোদি আরও বলেছিলেন যে এটি একটি "নতুন এবং শক্তিশালী বিজেপি"। রাজনৈতিক মহলের মতে যা স্পষ্টতই দলের কর্মীদের কাছে সুস্পষ্ট বার্তা যে দলে সব সিদ্ধান্তই নেবে শীর্ষ নেতৃত্ব।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজেপি উমা ভারতীকে এই মুহূর্তে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। কারণ তারা জানে, তিনি বিজেপি ছেড়ে দেওয়ার পরে তার জনপ্রিয়তা হারিয়েছিলেন। বিজেপি ছাড়ার পর নিজের রাজনৈতিক দল গঠন করে উমা ভারতী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং 2008 সালের নির্বাচনে পরাজিত হন। পরে, তিনি বিজেপিতে ফিরে যান এবং মোদির মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন।
প্রবীণ সাংবাদিক মিলিন্দ ঘটওয়াই জানিয়েছেন, “উমা ভারতী নিজের জন্য একটি জায়গা তৈরি করার এবং তাঁর আগের গৌরব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন। তাঁর কোনও আক্রমণই বিরোধীদের লক্ষ্য করে নয়, বরং তাঁর নিজের দল এবং সহকর্মীদের প্রতি।”
যদিও উমা ভারতী ঘোষণা করেছেন যে তিনি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। তবে পাশাপাশি তিনি একথা জানাতেও ভোলেননি যে তিনি রাজনীতি থেকে 'সন্ন্যাস' গ্রহণ করেননি।
সম্প্রতি, বিজেপির ডাকা ‘জন আশির্বাদ যাত্রা’-তে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ না পেয়ে অপমানিত বোধ করেছেন বলেও প্রকাশ্যে জানিয়েছেন উমা ভারতী। যা বিজেপি নেতৃত্বকে যথেষ্ট বিব্রত করেছে।
সাংবাদিক মিলিন্দ বলেন, “২০১২ সালে, উমা ভারতীকে মধ্যপ্রদেশ থেকে সরিয়ে দিয়ে উত্তরপ্রদেশের বুন্দেলখন্ড অঞ্চলে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পাঠানো হয়েছিল। কারণ বিজেপি নেতারা তখন যুক্তি দিয়েছিলেন যে উমা ভারতীর উপস্থিতিতে শিবরাজ সিং চৌহান সরকার এবং দলে সমস্যা তৈরি হবে। যদিও তারপর থেকে পুরো বিষয়গুলোই অনেক বদলে গেছে।"
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে উমা ভারতীর অসন্তোষে বিজেপির কোনও ক্ষতি হবে না। কারণ এখন অনেক ওবিসি নেতা রয়েছেন যারা উমা ভারতীর শূন্যস্থান পূরণ করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ফলে নিজের রাজ্যেই নিজেকে রাজনৈতিকভাবে প্রাসঙ্গিক রাখতে বিজেপির উপর চাপ তৈরি করা ছাড়া উমা ভারতীর সামনে আর কোনও বিকল্প নেই।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন