দলে ফিরেই কাজ শুরু করে দিলেন মুকুল রায়। শুক্রবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন। তারপরেই শনিবার সটান চলে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে। সেখানে গিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সারেন মুকুল রায়।
এদিন বিকেল ৪ টে ১৫ মিনিট নাগাদ অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে পৌঁছান মুকুল। সেখানে অভিষেকের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। যদিও সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি মুকুল রায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মূলত দলত্যাগীদের পুনরায় দলে ফেরাতেও কথা হয়েছে বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। পাশাপাশি বিজেপির একাধিক নেতাও তৃণমূলে যোগ দিতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন বলেও এক সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। তারা মুকুল রায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, সূত্রের খবর, দলে ফিরে আসার পর একদা তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড এখন কোন সাংগঠনিক দায়িত্ব পাবেন, কীভাবেই বা দলীয় সংগঠন বাড়াতে কাজে লাগানো হবে মুকুলকে, বৈঠকে তা নিয়েই মূলত আলোচনা চলে।
গত লোকসভা নির্বাচনের আগে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুল রায়ের হাত ধরে দল ছেড়েছেন অনেকেই। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে বিধানসভা নির্বাচনের আগেও। দলত্যাগী হয়েছেন অনেকে। কিন্তু বিজেপিতে গিয়ে কাজের সুযোগ না পেয়ে ফিরতে চাইছেন বেশির ভাগ তৃণমূলত্যাগী নেতারা।
ইতিমধ্যেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে শনিবার প্রত্যাবর্তন করেছেন মুকুল ও তার পুত্র শুভ্রাংশু রায়। যদিও রাজ্যের মন্ত্রী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন সৈনিক ফিরহাদ হাকিম অনেক আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তার। ফিরহাদ এর কথায় বোধোদয় হলে তাদের ক্ষমা করা উচিত, তবে দল সিদ্ধান্ত নেবে। অন্যদিকে বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন একই ভাবে। এবার দলে ফিরেই বাকিদের তৃণমূল শিবিরে আনতে উদ্যত হলেন মুকুল রায়। শনিবার তাই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে হাজির হলেন মুকুল রায়।
প্রায় তিন বছর ন মাস পর ফের পুরনো দল তৃণমূলে ফিরেছেন মুকুল রায়। সঙ্গে এনেছেন ছেলে শুভ্রাংশুকেও। এবার বিজেপির বেশ কিছু নেতাকেও তিনি ফোন করে দলে টানছেন বলেই সূত্রের খবর। জানা গেছে, ইতিমধ্যেই এক সাংসদ ও দশজন বিধায়ককে ফোন করে তৃণমূলে স্বাগত জানিয়েছে মুকুল বাবু। যা নিয়ে চিন্তার মেঘ দেখা দিয়েছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে।
মুকুল রায় তৃণমূলে ফেরার পরে যারা মুকুল রায়ের সঙ্গে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন তারা পুনরায় তৃণমূলে ফিরে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাদের দল জায়গা দেবে কিনা তা নিয়ে অবশ্য সিদ্ধান্ত নেবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এই অবস্থাতেই বিজেপির সাংসদ এবং ১০ বিধায়ককে ফোন করে তৃণমূলের স্বাগত জানালেন মুকুলবাবু।
তবে বিজেপির চিন্তার জায়গা, এদের মধ্যে কয়েকজন বিজেপি নেতৃত্বকে মুকুল রায়ের ফোন করার বিষয়টি জানালে অনেকেই এই বিষয়টিকে চেপে গিয়েছেন। তাই যারা বিষয়টিকে বিজেপি নেতৃত্বের কাছে জানাননি তাদের তৃণমূলে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারছেনা গেরুয়া শিবির।
সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতে উত্তরবঙ্গে এক সাংসদকে মুকুল রায় ফোন করেছিলেন। পাশাপাশি, এক জন কোচবিহারের, একজন জলপাইগুড়ির, একজন দক্ষিণ দিনাজপুর, একজন নদীয়া, একজন উত্তর ২৪ পরগণা, একজন হুগলী ও ২ জন পুরুলিয়া জেলার বিধায়ক সহ মোট দশ জনের কাছে গিয়েছে মুকুলের ফোন।
আগামী ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে এইভাবে মুকুল রায়ের দলবদল গেরুয়া শিবিরের কাছে নিঃসন্দেহে একটি বড় ধাক্কা। বিজেপি ছাড়ার পর মুকুল দল ভাঙার খেলায় নেমেছেন বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে৷ তৃণমূলে সামিল হয়ে তিনি বিজেপি’কে ধাক্কা দিতে চাইছেন বলেই দাবি৷ এ বিষয়ে বিজেপি’র তরফে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করা না হলেও, দলের অন্দরে ঝড় উঠেছে৷ যাঁরা ফোন পাওয়ার কথা দলীয় নেতৃত্বকে জানাননি তাঁদের নিয়ে জল্পনা এখন তুঙ্গে৷ উত্তরবঙ্গের এক সাংসদকে নিয়েও উদ্বেগে গেরুয়া শিবির৷
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন