'মুসলিম মুক্ত' ক্যাবিনেট গড়ার পথে মোদী সরকার

১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর কখনও এমন ঘটেনি যে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় কোনো 'মুসলিম' প্রতিনিধি নেই। তবে, ২০২২ সালে তা হতে চলেছে মোদীর মন্ত্রীসভায়। ভারতে মোট জন্যসংখ্যার ১৬ শতাংশ মুসলিম।
'মুসলিম মুক্ত' ক্যাবিনেট গড়ার পথে মোদী সরকার
'মুসলিম মুক্ত' ক্যাবিনেট গড়ার পথে মোদী সরকারফাইল ছবি
Published on

রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ মুখতার আব্বাস নাকভি, সৈয়দ জাফর ইসলাম এবং এম জে আকবর- সকলেরই মেয়াদ শেষের পথে। এই ৩ জনের কাউকেই নতুন করে রাজ্যসভার জন্য মনোনয়ন দেয়নি বিজেপি। অর্থাৎ খুব শীঘ্রই মোদীর মন্ত্রিসভায় মুসলিম প্রতিনিধিত্বের সংখ্যা শূন্য হতে চলেছে।

১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর কখনও এমন ঘটেনি যে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় কোনো 'মুসলিম' প্রতিনিধি নেই। তবে, ২০২২ সালে তা হতে চলেছে মোদীর মন্ত্রীসভায়। যেখানে ভারতে মোট জন্যসংখ্যার একটি বড় অংশ (১৬ শতাংশ) মুসলিম সম্প্রদায়ের।

আগে অনেকেই ভেবেছিলেন, কেন্দ্রের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাসকে রামপুর বা আজমগড় লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করতে পারে বিজেপি, যেখানে আগামী ২৩ জুন উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বিজেপি তা করেনি। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, চরম হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ভাবনার কারণে বিজেপি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বের ধারণাকে আর গুরুত্ব দিতে চায় না।

আগামী ৭ জুলাই মুখতার আব্বাস নকভির মেয়াদ শেষ হচ্ছে রাজ্যসভায়। ফলে নকভি তাঁর মন্ত্রিত্ব হারাবেন, যদি তিনি আগামী ৬ মাসের মধ্যে সাংসদ নির্বাচিত বা মনোনীত না হন।

তবে এখনও অনেকে আশা করছেন যে, কোনো বিশিষ্ট মুসলিম নেতাকে রাজ্যসভায় মনোনীত করতে পারে বিজেপি। কিভাবে? জানা যাচ্ছে, ১২ জন সাংসদকে রাজ্যসভায় মনোনীত করার ক্ষমতা আছে রাষ্ট্রপতির এবং বর্তমানে এক্ষেত্রে সাতটি শূন্যপদ আছে।

যদিও অনেকের মতে এই সম্ভাবনাও খুব ক্ষীণও। ভারতীয় রাজনীতিতে যেভাবে সাম্প্রদায়িক এজেন্ডা বাস্তবায়িত হচ্ছে, তাতে 'মুসলিম মুক্ত' হওয়ার পথে পা বাড়াচ্ছে বিজেপি। তবে শুধু বিজেপি নয়, সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব বাড়ার কারণে অন্যান্য রাজনৈতিক দলেও বৃহত্তম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

রাজ্যস্তরে মুসলিম প্রতিনিধিত্বের হাল

ভারতে মুসলিমদের জনসংখ্যা যথেষ্ট হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে কোনো মুসলিম মুখ্যমন্ত্রী নেই। ন্যাশনাল হেরাল্ডে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুসলিমদের জনসংখ্যা যথেষ্ট এমন ১৫টি রাজ্যের মন্ত্রিসভায় একজন মুসলিম মন্ত্রীও নেই। এর মধ্যে রয়েছে আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া, গুজরাট, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, কর্ণাটক, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ওড়িশা, সিকিম, ত্রিপুরা এবং উত্তরাখণ্ড।

বাকি রাজ্যের হাল-হকিকত

দিল্লিতে মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষ মুসলিম সম্প্রদায়ের। তবে, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন আপ (AAP) সরকারে মাত্র একজন মুসলিম মন্ত্রী আছেন - ইমরান হোসেন, দিল্লির খাদ্য সরবরাহ ও বন দপ্তরের মন্ত্রী।

পশ্চিমবঙ্গে ৩০ শতাংশ মানুষ মুসলিম সম্প্রদায়ের। এই রাজ্যে বর্তমানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে ৭ জন মুসলিম মন্ত্রী আছেন। যা ভারতের সমস্ত রাজ্যের মধ্যে সবথেকে বেশি।

মহারাষ্ট্রে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা ১২ শতাংশ। সেখানে ৪ জন মুসলিম মন্ত্রী আছেন।

কেরালায়, পিনারাই বিজয়নের নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সরকারে দুইজন মুসলিম মন্ত্রী আছেন - কে. টি. জলিল এবং এ সি মঈদিন।

উত্তরপ্রদেশে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষ মুসলিম। কিন্তু, যোগী আদিত্যনাথের সরকারে মাত্র একজন মুসলিম মন্ত্রী রয়েছেন।

বাকি ৭ রাজ্য - অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু এবং তেলেঙ্গানার মন্ত্রিসভায় মাত্র একজন করে মুসলিম মন্ত্রী আছেন।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in