সুদখোর মহাজনের ফাঁদে পড়ে ঋণের দায়ে জর্জরিত অসহায় বাবা অবশেষে ছেলেকে বিক্রি করেই সেই কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছেন। ছেলেকে বিক্রি করতে চেয়ে রাস্তায় প্ল্যাকার্ড হাতে বসেছেন তিনি। হৃদয়বিদারক এই দৃশ্য দেখা গেল উত্তরপ্রদেশের আলীগড়ে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছেলেকে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে সাথে নিয়ে আলীগড়ের গান্ধীপার্ক বাসস্ট্যান্ডের কাছে পথে বসলেন পেশায় ই-রিক্সাচালক রাজকুমার। গলায় ঝুলতে থাকা পোস্টারে লেখা, “মেরা বেটা বিকাও হ্যায়। মুঝে বেটা বেচনা হ্যায়।”
প্রথমদিকে পথচলতি মানুষ সেভাবে খেয়াল না করলেও পরেরদিকে ধীরে ধীরে রাজকুমারের পরিবারকে ঘিরে ভিড় জমায় সাধারণ মানুষ। তখনই কৌতূহলী আম আদমির প্রশ্নে রাজকুমার তাঁর করুণ কাহিনী শোনান। একটি সম্পত্তি কেনার জন্য জন্য ব্যাঙ্কের কাছে ঋণ চেয়ে আবেদন করেন রাজকুমার। কিন্তু ব্যাঙ্ক তাঁকে ঋণ দিতে রাজি হয়নি। এরপরেই সুদখোর মহাজনের খপ্পড়ে পড়েন তিনি।
এক মহাজন রাজকুমারকে সাহায্য করার অছিলায় তাঁর যাবতীয় সম্পত্তির নথি ব্যাঙ্কে জমা রেখে তাঁর নামে লোন ইস্যু করে টাকা তোলেন। কিন্তু রাজকুমারকে সেই টাকা না দিয়ে নিজে নিয়ে নেন বলে অভিযোগ। উপরন্তু, ওই মহাজন এখন তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা চেয়ে চাপ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রাজকুমারের। এমনকি তাঁর রোজগারের শেষ সম্বল ই-রিক্সাটাও কেড়ে নেন। বাড়িতে এসে স্ত্রী ও শিশু কন্যার উপরেও অত্যাচার চালান।
চোখে জল নিয়ে রাজকুমার জানিয়েছেন, “পুলিশের কাছে গিয়েও কোনও লাভ হয়নি। সেখান থেকে কোনও সাহায্য পাইনি। এখন কেউ যদি আমার ছেলেকে ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকায় কিনে নেন, তাহলে সেই টাকায় আমি আমার মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করে বিয়ে দিতে পারি আর আমার পরিবারকে রক্ষা করতে পারি।” ওইরাতেই গান্ধীপার্ক থানার পুলিশ এসে রাজকুমার ও তাঁর পরিবারকে থানায় নিয়ে যায়। এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
এই ঘটনা নিয়ে বিজেপি সরকারকে নিশানা করেছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। অখিলেশের বক্তব্য, “একজন বাবাকে বাধ্য হয়ে নিজের ছেলেকে বিক্রি করতে হচ্ছে। এই ছবি বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পরে বিশ্ব মঞ্চে ভারতের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার আগে কেউ দয়া করে এই সরকারের ঘুম ভাঙান।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন