দেশের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে যুবকদের প্রতি সপ্তাহে ৭০ ঘন্টা কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন এন আর নারায়ণ মূর্তি। ইনফোসিস প্রতিষ্ঠাতার এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ নেটিজেনরা। এমনকি উদ্যোক্তাদের মধ্যেও মূর্তির এই মন্তব্যের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
3one4 ক্যাপিটালের পডকাস্ট 'দ্য রেকর্ড'-এর উদ্বোধন পর্বে ইনফোসিসের প্রাক্তন সিএফও মোহনদাস পাইয়ের সাথে একটি কথোপকথনকালে চীন, জাপান এবং জার্মানির সাথে ভারতের তুলনা করে মূর্তি বলেন, “ভারতের কাজের উৎপাদনশীলতা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। আমরা যদি আমাদের উৎপাদনশীলতা না বাড়াই, তাহলে আমরা এই দেশগুলির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হব না। এই দেশগুলি অসাধারণ উন্নতি করেছে। আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মের উচিত সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করা। তবেই দেশে কর্মসংস্কৃতির পরিবেশের উন্নতি ঘটবে।“
মূর্তি-র এই মন্তব্যের সমালোচনা করছে যুব সমাজ। ভারতীয় কমেডিয়ান এবং অভিনেতা বীর দাস নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন,”জীবন কঠিন। আপনি একটি মেয়েকে দেখে প্রেমে পড়লেন, বিয়ে করলেন। মেয়েটির বাবা চান আপনি সপ্তাহে ৭০ ঘন্টা কাজ করুন। কিন্তু আপনি এত কঠোর পরিশ্রম করতে পারবেন না, আপনি কেবল আরাম করতে চান এবং ইংল্যান্ড শাসন করতে চান।"
অনেক উদ্যোক্তাও নারায়ণমূর্তি-র মতামতের সাথে একমত নন। upGrad প্রতিষ্ঠাতা রনি স্ক্রুওয়ালা সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ”উৎপাদনশীলতা বাড়ানো মানে শুধু দীর্ঘ সময় কাজ করা নয়। আপস্কিলিং, কাজের পরিবেশ, কাজ অনুযায়ী ন্যায্য বেতন – এই সব কিছুও ভাল হতে হবে। কাজের কোয়ালিটি>কাজের সময় হতে হবে।“
আবার JSW গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সজ্জন জিন্দাল নারায়ণ মূর্তির বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদাহরণ টেনে তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “আমি আন্তরিকভাবে নারায়ণ মূর্তি-র বক্তব্যকে সমর্থন করি। এটা বার্নআউট সম্পর্কে নয়, এটি ডেডিকেশনের বিষয়। আমাদের ভারতকে একটি উন্নত অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরতেই হবে যাতে ২০৪৭ সালে আমরা আমাদের দেশকে নিয়ে গর্ব করতে পারি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা কাজ করেন। আমার বাবা সপ্তাহে ৭ দিনই ১২-১৪ ঘন্টা কাজ করতেন। আমি প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘন্টা কাজ করি।“
ওলা ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ভবিশ আগরওয়ালও নারায়ণমূর্তির মন্তব্য সমর্থন করেছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরাও নারায়ণ মূর্তির মন্তব্য ভালভাবে নেননি। বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন বেতনের কথা উল্লেখ করে তাঁদের প্রশ্ন, কম বেতনপ্রাপ্ত ব্যক্তি সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করবে কেন? অনেকে আবার দাবি করেছেন, ইনফোসিসের 'সঠিক' বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব ভাল রেকর্ড নেই।
এক এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, “অতিরিক্ত কাজ আমাকে ৩৮ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাক এনে দিতে পারে এবং সারাজীবন ওষুধের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে আমাকে। দয়া করে এই লোকেদের কথা শুনবেন না। রক্তচোষা জোঁক এঁরা, অনেক উঁচু চেয়ারে বসে বক্তৃতা দেয়।“
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন