অখিল ভারতীয় আখাড়া পরিষদের প্রধান মহন্ত নরেন্দ্র গিরির মৃত্যুরহস্য ক্রমশই অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে। ইতিমধ্যেই রহস্যময় এই মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। যেখানে একের পর এক উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গত সোমবার মহন্ত নরেন্দ্র গিরির ঝুলন্ত দেহের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিলো এক সুইসাইড নোট। যেখানে তিনি অভিযোগ করেছিলেন তাঁর শিষ্য আনন্দ গিরি তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছেন। আনন্দ গিরি এক মহিলার সাথে তাঁর একটি ছবি তৈরি করেছিলেন বলেন প্রয়াত মহন্ত সুইসাইড নোটে অভিযোগ জানিয়েছেন।
প্রয়াত মহন্তর সুইসাইড নোট অনুসারে, তিনি জানতে পেরেছিলেন আনন্দ গিরি তাঁর কম্পিউটারে এক মহিলার সঙ্গে মহন্ত নরেন্দ্র গিরির ছবি এডিট করে বসিয়েছিলেন এবং তিনি সেই ছবি পাবলিক ডোমেইন-এ ছেড়ে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন।
ওই সুইসাইড নোটে মহন্ত নরেন্দ্র গিরি লিখেছেন, আনন্দ আমাকে জানিয়েছে একবার এই ছবি ছড়িয়ে পড়লে কতজনের কাছে আপনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করবেন? আমি চিরকাল সম্মানের সঙ্গে বেঁচে এসেছি এবং এই অসম্মান আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
যদিও তদন্তকারী আধিকারিকরা শুধুমাত্র এই কারণেই মহন্ত নরেন্দ্র গিরির রহস্যজনক মৃত্যুর কথা মেনে নিতে নারাজ। তাঁরা ইতিমধ্যেই আনন্দ গিরিকে গ্রেপ্তার করেছেন এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আনন্দ গিরি ছাড়াও সুইসাইড নোটে আদ্য তিওয়ারী এবং তাঁর ছেলে সন্দীপ তিওয়ারীর নাম আছে। তাঁদেরও পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।
প্রয়াগরাজ জোনের অ্যাডিশনাল ডিজি প্রেম প্রকাশ মহন্ত নরেন্দ্র গিরির মৃত্যু রহস্য তদন্তের জন্য ১৮ সদস্যের এক সিট গঠন করেছেন।
প্রয়াগরাজ এবং হরিদ্বারের সন্ন্যাসীরা মহন্তর মৃত্যুর পেছনে বড়ো কোনো চক্রান্ত আছে বলে মনে করছেন। তাঁদের মতে মহন্ত নরেন্দ্র গিরি অখিল ভারতীয় আখাড়া পরিষদের প্রধান হবার পর একাধিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যা অনেকেরই পছন্দ হয়নি।
জনৈক সন্ন্যাসীর বক্তব্য অনুসারে, আমরা মনে করিনা এই মৃত্যুর পেছনে একজন বা দু’জনের হাত আছে। এই মৃত্যুর পেছনে এমন অনেক মানুষের হাত আছে যারা ২০১৬ সালে আখাড়া পরিষদের প্রধান হওয়ার পর মহন্ত নরেন্দ্র গিরির নেওয়া সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে মহন্ত নরেন্দ্র গিরি ভন্ড সাধুদের এক তালিকা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। যাতে অনেকেই তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তিনি আরও জানিয়েছিলেন এইসব ভন্ড বাবাদের জেলে পাঠানো উচিত। এঁদের সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত করা উচিত। তাঁর এই সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে সাধুদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিলো। এর দু’মাস পরে তিনি ভন্ড সাধুদের আরও এক তালিকা প্রকাশ করেন।
২০১৯ সালে এলাহাবাদের দারায়াগঞ্জ-এর পঞ্চায়েতি আখাড়ার সেক্রেটারি আশিষ গিরির হত্যাকান্ডে মহন্ত নরেন্দ্র গিরির নাম জড়িয়ে যায়। সম্পত্তি জনিত এক বিবাদে আশিষ গিরিকে হত্যা করা হয়। যদিও পরে পুলিশের পক্ষ থেকে মহন্ত নরেন্দ্র গিরিকে ক্লিনচিট দেওয়া হয়।
২০২১ কুম্ভ মেলার সময়েও বিবাদে জড়িয়েছিলেন মহন্ত নরেন্দ্র গিরি। এবছর কুম্ভমেলার সময় তিনি রূপান্তরকামীদের এক আখাড়াকে অখিল ভারতীয় আখাড়া পরিষদের মান্যতা দিতে অস্বীকার করেন। যা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে।
বাগম্বরী মঠের এক সন্ন্যাসীর বক্তব্য অনুসারে, মহন্ত নরেন্দ্র গিরির সঙ্গে বহু মানুষের বিবাদ ছিলো। তাই ব্ল্যাকমেল তত্ব অস্বীকার করা যায়না। আনন্দ গিরি ছাড়াও এই ঘটনার পেছনে আরও বহু মানুষ আছেন। যা বের করার জন্য তদন্তের প্রয়োজন।
(Except for the headline, this story has not been edited by People's Reporter and is translated and published from a syndicated feed.)
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন