২০২২ সালে দেশে মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা বেড়েছে ৪ শতাংশ। ২০২১ সালে মহিলাদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের ৪,২৮,২৭৮টি ঘটনার অনুপাতে ২০২২ সালে এইধরণের ঘটনা ঘটেছে ৪,৪৫,২৫৬টি। অর্থাৎ ১ বছরে মহিলাদের ওপর নথিভুক্ত অত্যাচারের সংখ্যা বেড়েছে ১৬,৯৭৮ টি। গত শুক্রবার প্রকাশিত এনসিআরবি রিপোর্ট অনুসারে এই তথ্য জানা গেছে। রবিবারই এই পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে আনা হয়েছে।
মহিলাদের ওপর অত্যাচার -
সদ্য প্রকাশিত এনসিআরবি পরিসংখ্যান অনুসারে মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনায় ৩১.৪ শতাংশ মহিলা অত্যাচারিত হয়েছে স্বামী অথবা পরিবারের হাতে। অপহরণ বা তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ১৯.২ শতাংশ। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৭.১ শতাংশ।
ধর্ষণ -
২০২২ সালে দেশে ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে ৩১,৫১৬টি। যার মধ্যে শীর্ষে রাজস্থান। যেখানে ২০২২ সালে ৫,৩৯৯টি এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে। এরপরেই তালিকায় আছে উত্তরপ্রদেশ (৩,৬৯০), মধ্যপ্রদেশ (৩,০২৯), মহারাষ্ট্র (২,৯০৪) এবং হরিয়ানা (১,৭৮৭)। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে সর্বাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে। মোট ১,২১২টি।
শিশুদের ওপর অত্যাচার -
এনসিআরবি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে শিশুদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে ১,৬২,৪৪৯টি। ২০২১ সালের তুলনায় শিশুদের ওপর অত্যাচারের হার বেড়েছে ৮.৭ শতাংশ। ২০২১ সালে শিশুদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছিল ১,৪৯,৪০৪টি। শিশুদের ওপর অত্যাচারের ঘটনার ৪৫.৭ শতাংশ ক্ষেত্রে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে এবং পকসো ধারায় বা শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩৯.৭ শতাংশ।
তফশিলি জাতি ও উপজাতীয়দের ওপর অত্যাচার -
এনসিআরবি-র তথ্য জানাচ্ছে ২০২২ সালে তফশিলি জাতির ওপর অত্যাচারের ঘটনার হার বেড়েছে ১৩.১ শতাংশ। ২০২১ সালে দেশে এই ধরণের ঘটনা ঘটেছিল ৫০,৯০০টি। যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭,৫৮২টি।
তফশিলি উপজাতীয় মানুষদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের ঘটনা ২০২২ সালে বেড়েছে ১১.১ শতাংশ।
সাইবার ক্রাইম -
এছাড়াও দেশে ২০২১ সালের অনুপাতে ২০২২ সালে সাইবার ক্রাইমের ঘটনা বেড়েছে ২৪.৪ শতাংশ। ২০২১ সালে দেশে সাইবার ক্রাইমের ঘটনা ঘটেছিল ৫২,৯৭৪টি। যা ২০২২ সালে এই ঘটনা ঘটেছে ৬৫,৮৯৩টি।
বর্ষীয়ান নাগরিকদের ওপর অত্যাচার -
২০২২ সালে দেশে বর্ষীয়ান নাগরিকদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে ২৮,৫৪৫টি। যা ২০২১ সালের তুলনায় বেড়েছে ৯.৩ শতাংশ। ২০২১ সালে এই ধরণের ঘটনা ঘটেছিল ২৬,১১০টি।
খুনের ঘটনা -
২০২২ সালে দেশে মোট ২৮৫২২টি খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। দেশজুড়ে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একথা জানিয়েছে এনসিআরবি। অর্থাৎ ২০২২ সালে প্রতিদিন খুন হয়েছেন ৭৮ জন। ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৯,২৭২ এবং ২০২০ সালে ২৯,১৯৩। নির্ধারিত সময়ের প্রায় পাঁচ মাস পরে এবার এই পরিসংখ্যান প্রকাশিত হল। সাধারণত প্রতিবছর জুলাই অথবা আগস্ট মাসে এই পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য অনুসারে ২০২২-এ খুনের ২৮৫২২টি ঘটনার মধ্যে বিভিন্ন বিবাদের কারণে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৯,৯৬২টি। ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩,৭৬১ টি।
২০২২ সালে খুনের ঘটনার সর্বোচ্চ এফআইআর দায়ের হয়েছে উত্তরপ্রদেশ। ৩,৪৯১টি। এরপরেই তালিকায় আছে বিহারের নাম। যেখানে ২০২২ সালে খুনের অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছে ২,৯৩০টি। এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে মহারাষ্ট্র। যেখানে খুনের ঘটনায় এফআইআর দায়ের হয়েছে ২,২৯৫টি। এরপরেই তালিকায় আছে মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের নাম। যেখানে এই সংখ্যা যথাক্রমে ১,৯৭৮ এবং ১,৮৩৪টি। দেশের মোট খুনের ৪৩.৯২ শতাংশই ঘটেছে এই পাঁচ রাজ্যে।
একই সময়ে খুনের সংখ্যা সবথেকে কম সিকিম, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, গোয়া এবং মণিপুরে। এই পাঁচ রাজ্যে ২০২২ সালে খুনের অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছে যথাক্রমে ৯, ২১, ৩১, ৪৪ এবং ৪৭টি।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে খুনের ঘটনায় শীর্ষে আছে দিল্লি। যেখানে ২০২২ সালে ৫০৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। জম্মু ও কাশ্মীরে ঘটেছে ৯৯টি ঘটনা, পুদুচেরিতে ৩০টি, চন্ডীগড়ে ১৮টি, দাদরা ও নগরহাভেলী এবং দমন ও দিউতে ঘটেছে ১৬টি ঘটনা, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ৭টি এবং লাদাখে ৫টি। লাক্ষাদ্বীপ-এ ২০২২-এ কোনও খুনের ঘটনা ঘটেনি।
বয়সের দিক থেকে বিচার করলে ৯৫.৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ খুন হয়েছে। মোট খুন হওয়া মানুষের মধ্যে ৮,১২৫ জন মহিলা এবং ৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি আছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন