নীতি আয়োগের এক রিপোর্টকে ‘জুমলা’ বলে অভিহিত করলো কংগ্রেস। সম্প্রতি নীতি আয়োগ প্রকাশিত এক রিপোর্টে দাবি করা হয় ২০২২-২৩ পর্যন্ত বিগত ৯ বছরে দেশের ২৪.৮২ কোটি মানুষের বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (Multi-dimensional Poverty) থেকে উন্নয়ন ঘটেছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই রিপোর্টকে ‘চক্রান্ত’ বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে মোদী সরকার আসলে এই বড়ো সংখ্যক মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প এবং বিনামূল্যের রেশন থেকে বঞ্চিত করতে চায়।
বৃহস্পতিবার এআইসিসি সদর দপ্তরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস মুখপাত্র এবং সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের প্রধান সুপ্রিয়া শ্রীনাতে বলেন, বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক থেকে ২৪.৮৪ কোটি মানুষের উন্নয়নের কথা কেন্দ্রের জুমলার তালিকায় আরও এক নতুন জুমলা। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এই জুমলা চলবে।
এদিন তিনি বলেন, সত্যিকে এভাবে লুকিয়ে রাখা যাবেনা এবং বাস্তব হল নীতি আয়োগ কীভাবে এই সংখ্যায় পৌঁছালো। দারিদ্র্য কীভাবে নির্ণয় করা হবে সেই পদ্ধতিতেই বদল করেছে নীতি আয়োগ এবং এই বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড অথবা বিশ্ব ব্যাঙ্কের কোনও তথ্য উদ্ধৃত করেনি।
সুপ্রিয়া বলেন, এই রিপোর্ট নীতি আয়োগ তৈরি করেছে তাদের করা এক সমীক্ষার ভিত্তিতে। কিন্তু বাস্তব সত্য সম্পূর্ণ অন্য। এই পরিসংখ্যান বিজেপির ইকোসিস্টেমের অধীন নির্জলা মিথ্যা।
কংগ্রেস মুখপাত্র জানান, সমীক্ষা অনুসারে দেখানো হয়েছে কোনও বেকারত্ব নেই। যদিও আসল সত্যি হল দেশ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব, আয় বৈষম্য, কম মজুরি এবং চূড়ান্ত দারিদ্র্যে ভুগছে।
সুপ্রিয়া দাবি করেন, এই সমীক্ষার বাস্তবতা হল দেশের গরিব মানুষের প্রতি এক গভীর চক্রান্ত। কারণ খুব শীঘ্রই এই ২৫ কোটি মানুষকে গরিব নয় বলে ঘোষণা করা হবে এবং তাদের জন্য বিনামূল্যের রেশন সহ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতা থেকে বাদ দেওয়া হবে। এদের আর কোনও ভরতুকি দেওয়া হবে না, বিনামূল্যের রেশন দেওয়া হবেনা। আমরা এই বিষয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।
সুপ্রিয়া বলেন, মোদী সরকার এবার এক নতুন বেলুন নিয়ে এসেছে এবং দাবি করছে মোদী সরকারের ৯ বছরে দেশের ২৪.৮২ কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু বাস্তব হল এই রিপোর্ট দেশের মানুষের বিরুদ্ধে এক গভীর চক্রান্ত।
রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সরকারের দাবি আর বাস্তবের ক্ষেত্রে চারটি গুরুতর সমস্যা আছে। যদি গরিবের সংখ্যা সত্যিই কমে তাহলে কীভাবে তাদের খরচ কমতে পারে? যদি দারিদ্র্য ১১.৭ শতাংশ কমে এবং শুধুমাত্র ১৫ কোটি মানুষ গরিব থাকে তাহলে সরকারকে কেন ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যের রেশন দিতে হয়?
তিনি বলেন, নীতি আয়োগ যখন এই সমীক্ষা করলো তখন কেন দারিদ্র্য পরিমাপ করতে আন্তর্জাতিক স্তরের মাপকাঠিগুলোকে না ধরে শুধুমাত্র সরকারি প্রকল্পগুলোর নিরিখে সমীক্ষা করল?
তিনি বলেন, ইউপিএ সরকার ২৭ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমারেখার বাইরে নিয়ে এসেছিল এবং তা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টে স্বীকৃতি লাভ করেছিল। বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানিয়েছিল এই সমস্ত তথ্য সত্য। আর এখন মোদী সরকার নিজেদের ঢাক নিজেরা পেটাচ্ছে।
নীতি আয়োগ প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয় সবথেকে বেশি দারিদ্র্য কমেছে উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং মধ্যপ্রদেশে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে ২০১৩-১৪-তে যেখানে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার ছিল ২৯.১৭ শতাংশ তা ২০২২-২৩-এ কমে দাঁড়িয়েছে ১১.২৮ শতাংশে। এইসময় প্রায় ২৪.৮৩ কোটি মানুষ এই সীমারেখার বাইরে এসেছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক এক্স পোষ্টে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, আমরা সর্বস্তরে উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাব যা আগামী দিনে প্রতিটি ভারতীয়কে উন্নত ভবিষ্যৎ উপহার দেবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন