আবারও শিবির বদলানোর পথে নীতিশ কুমার। বিহার তথা রাজধানীর রাজনৈতিক মহলে এখন এই নিয়েই গুঞ্জন। সূত্র অনুসারে, বিজেপি শিবিরে যোগ দেবার আগে নীতিশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেবেন। বিহারে মুখ্যমন্ত্রী পদে নীতিশ কুমারের ইস্তফার অর্থ বর্তমানে যে আরজেডি-জেডিইউ জোট সরকার চলছে তার পতন।
জানা গেছে, ইতিমধ্যেই নীতিশ কুমার পাটনায় তাঁর দলীয় বিধায়কদের ডেকে পাঠিয়েছেন এবং আজকেই তিনি আরজেডি-র সঙ্গে বন্ধন ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে নীতিশ কুমারকে ফের এনডিএ শরিক হিসেবেই লড়াই করতে দেখা যাবে। সূত্র অনুসারে একদিকে যেমন লালন সিং, বিজয় কুমার চৌধুরী এবং জেডিইউ-এর অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব বৈঠকে বসেছেন তেমনই শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে দিল্লি রওনা দিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সম্রাট চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী চৌবে।
সম্প্রতি প্রয়াত কর্পূরী ঠাকুরকে কেন্দ্রীয় সরকার মরণোত্তর ভারতরত্ন দেবার পরেই এক জনসভা থেকে খোলাখুলি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেন নীতিশ কুমার। ওইদিনই রাজনীতিতে পরিবারবাদ প্রসঙ্গ টেনে কড়া সমালোচনা করেন নীতিশ। রাজনৈতিক মহলের মতে নীতিশের সেই বক্তব্যের লক্ষ্য ছিল লালুপ্রসাদ যাদবের দিকে।
রাজনৈতিক মহলের মতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই বিজেপির পক্ষ থেকে কর্পূরী ঠাকুরকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছে। যাকে মাস্টারস্ট্রোক হিসেবেও উল্লেখ করা হচ্ছে। বিহারের ওবিসি ভোটব্যাঙ্কের দিকে লক্ষ্য রেখেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত। এই ভোটব্যাঙ্ক যাদের দিকে থাকবে তাদেরই নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা প্রবল।
২৪৩ সদস্য বিশিষ্ট বিহার বিধানসভায় জেডিইউ-র বিধায়ক সংখ্যা ৪৫। বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭৮ এবং আরজেডি-র বিধায়ক সংখ্যা ৭৯। এছাড়াও কংগ্রেসের ১৯, বাম দলগুলির ১৬ বিধায়ক আছে। মুখ্যমন্ত্রী পদে সাময়িক ইস্তফা দিলেও বিজেপি এবং জিতন রাম মাঝির দলের ৪ বিধায়কের সমর্থনে ফের মুখ্যমন্ত্রী হতে নীতিশ কুমারের খুব একটা অসুবিধে হবার কথা নয়।
যদিও এবার লালুপ্রসাদ যাদবও সরকার টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। বিহার বিধানসভায় সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১২২ জন বিধায়কের সমর্থন। সেক্ষেত্রে আরজেডির ৭৯, কংগ্রেসের ১৯, বামেদের ১৬ বিধায়ক ধরলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১১৪। অর্থাৎ ঠিক ৮ জন কম। জিতনরাম মাঝির ৪, মিম-এর ১ এবং ১ নির্দল বিধায়ককে সঙ্গে নিলেও ২ বিধায়ক কম থাকবে লালুপ্রসাদ গোষ্ঠীর।
বিহারের রাজনীতিতে একাধিকবার শিবির বদল করে রেকর্ড করেছেন নীতিশ কুমার। এবার যদি তিনি শিবির বদলালে তা হবে পঞ্চমবার। ৭২ বছর বয়সী নীতিশ কুমার শেষবার শিবির বদলেছিলেন ২০২২ সালে। সেবার তিনি এনডিএ শিবির ছেড়ে আরজেডি-র সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করেন। এর আগে ২০১৩ সালে আচমকাই শিবির বদলে এনডিএ ছেড়ে আরজেডি শিবিরে যোগ দেন। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পর ২০২০তে আরজেডি সঙ্গ ছাড়েন নীতিশ কুমার এবং ফের যোগ দেন এনডিএ শিবিরে। এর ঠিক ২ বছর পর ২০২২ সালে আবারও এনডিএ শিবির ছেড়ে আরজেডি শিবিরের সঙ্গে গাঁটছড়া বাধেন নীতিশ কুমার।
তবে এবার নীতিশ কুমার যাই করুন না কেন তাতে সাফল্য আসার সম্ভাবনা খুবই কম। বিগত কয়েক দশক ধরে নীতীশ কুমারকে রাজনৈতিক জীবনে বারবার ওঠাপড়া দেখা গেলেও তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ ধরে রেখেছেন। যদিও বিগত কয়েক বছর ধরেই তাঁর জনপ্রিয়তার পারদ নিম্নমুখী।
বিহারের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নীতিশ কুমারের জনপ্রিয়তা বিগত কয়েক বছর ধরেই ক্রমশই কমছে। ২০১০ সালের নির্বাচনে যে জেডিইউ ১১৫ আসন পেয়েছিল ২০১৫-র নির্বাচনে সেই আসন সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৭১ এবং ২০২০ তে তা আরও কমে হয় ৪৫। এমনিতেই তাঁর গায়ে ‘দলবদলু’ তকমা সেঁটে গেছে। আরও একবার শিবির বদল করে নীতিশ কুমার তাঁর ইমেজকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবেন বলেই রাজনৈতিক মহলের অভিমত। বিহারের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আচমকা এই শিবির বদলানোকে ভালোভাবে নেবে না রাজ্যের সাধারণ মানুষ বলেই তাদের ধারণা। ফলে শুধুমাত্র শিবির বদল করে নিজের রাজনৈতিক জমি ফের ফিরে পাওয়া নীতিশ কুমারের পক্ষে কার্যত অসম্ভব।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন