মহামারী করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে সারা দেশে প্রায় ২০ হাজারের বেশি স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে, শিক্ষকতা হারিয়েছেন ১ লক্ষ ৮৯ হাজার শিক্ষক। সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে (ইউনিফাইড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস (UDISE+) থেকে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তাতেই উঠে এসেছে এই তথ্য।
এই বিষয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, করোনার (কোভিড-১৯) প্রথম ঢেউ স্কুল শিক্ষার উপর প্রভাব ফেলেছিল ঠিকই, তবে করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্টের জেরে এই সংকট আরও তীব্র হয়েছিল।
২০১৮-১৯ সালে কেন্দ্রের তরফে স্কুল শিক্ষা ও সাহিত্য বিভাগের পক্ষ থেকে UDISE গণনা শুরু হয়। তারপর থেকে ২০২০-২১ সাল নাগাদ স্কুলের সংখ্যা হ্রাসের ঘটনা খুব একটা ঘটেনি। তবে, এটি বৃদ্ধি পেয়েছে ২০২১-২২ সালে।
২০২০-২১ সালে সারাদেশে মোট স্কুলের সংখ্যা ছিল ১৫ লক্ষ ৯ হাজার ১৩৬ টি। আর, এক বছরের ব্যবধানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ লক্ষ ৮৯ হাজার ১১৫ টি। এর মধ্যে প্রায় ২৪ শতাংশ হল বেসরকারী স্কুল, আর ৪৮ শতাংশ সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘গত বছর চরম আর্থিক সঙ্কটের জেরে ছাত্রছাত্রীদের বেসরকারি (প্রাইভেট) স্কুল থেকে সরকারি স্কুলে স্থানান্তরিত করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই লক্ষণ আসলে মহামারীকালে চাকরি হারানো এবং বেতন হ্রাসের ঘটনাকে চিহ্নিত করে।’
২০২১-২২ সালে সরকারী স্কুলে নতুন করে ভর্তি হয়েছে ৮৩ লক্ষ ৩৫ হাজার ছাত্রছাত্রী। অন্যদিকে, বেসরকারী স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমেছে ৬৮ লক্ষ ৮৫ হাজার।
কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, ‘এই সংখ্যা কমার মূল কারণ, বেসরকারী স্কুলের সংখ্যা হ্রাস বা বন্ধ হয়ে যাওয়া।’ তবে, শিক্ষকের সংখ্যা কমা এবং শিক্ষকতা থেকে সরে দাঁড়ানো নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি শিক্ষা মন্ত্রক৷
জানা যাচ্ছে, ২০২০-২১ সালে সারাদেশে মোট রাজ্য সরকারি স্কুল ছিল ১০ লক্ষ ২৯ হাজার ৯৭৮ টি। আর, ২০২১-২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০ লক্ষ ২০ হাজার ২১৯ টি। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে সারাদেশে ৯ হাজার ৭৫৯ টি রাজ্য সরকারি স্কুলের সংখ্যা কমেছে।
তবে, করোনাকালে সারাদেশে আবাসিক স্কুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০-২১ সালের আবাসিক স্কুলের সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার ৯৪৬ টি। ২০২১-২২ সালে সংখ্যায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৩৬৯ টি।
ভারতে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে স্কুল বন্ধের ঘটনা সবচেয়ে ঘটেছে মধ্যপ্রদেশে। বিজেপি শাসিত এই রাজ্যে মোট (কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি) স্কুলের সংখ্যা কমেছে ৬ হাজার ৪৫৭ টি। একইসঙ্গে, ১ হাজার ১৬৭ টি বেসরকারি স্কুল বন্ধ হয়েছে এই রাজ্যে।
অন্যদিকে, শিক্ষকের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে রাজস্থানে। এক বছরের মধ্যে (২০২১-২২ সালে) কংগ্রেস শাসিত এই রাজ্যে শিক্ষকতা ছেড়েছেন ৩১ হাজার ১৪৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। এরপরে রয়েছে ওড়িশা। বিজু জনতা দলের সরকারের আমলে এই রাজ্যে শিক্ষকতা ছেড়েছেন ২৪ হাজার ৮৩৮ জন।
এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কর্ণাটক। যেখানে শিক্ষকতা ছেড়েছেন ২২ হাজার ৯৩৭ জন। পাঞ্জাবে ২১ হাজার ৯৪০ জন, বিহারে ১৮ হাজার ৬৪৩ জন, আসামে ১৭ হাজার ৩৯৭ জন এবং গুজরাটে ১০ হাজার ৬৮৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা।
মজার বিষয় হল, করোনাকালে বিহারে সরকারী এবং বেসরকারী কোনও স্কুল বন্ধ হয়নি। তবে, শিক্ষকের সংখ্যা কমেছে ১৮ হাজার ৬৪৩ জন।
With Inputs- NewsClick
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন