২০২২ সালের গ্লোবাল অক্সফাম ডাভোস রিপোর্ট অনুসারে, ভারতের সবচেয়ে সম্পদশালীরা কোভিড-১৯ সংকটের সময় তাদের সম্পদ দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছে। যা আদপে দেশকে ধ্বংস করেছে এবং দারিদ্র্যকে আরও খারাপ অবস্থায় পৌঁছে দিয়েছে। অক্সফ্যামের মতে, সরকারের উচিত সম্পদের পুনর্বন্টন করার জন্য তাদের নীতির পুনর্বিবেচনা করা। একথা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন অক্সফ্যাম ইন্ডিয়ার সিইও অমিতাভ বেহার। ‘ইনইক্যুয়ালিটি কিলস’ শীর্ষক এই রিপোর্ট ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের ডাভোস এজেন্ডার আগেই প্রকাশিত হয়েছে।
গত বছর দেশের চরম কোভিড সংকটের সময় দেশে নতুন করে ৪০ জন বিলিয়নেয়ার হয়েছেন। তার আগের বছরের ১০২ জনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশে এখন মোট বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ১৪২। কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ভয়ংকর অবস্থা সামনে এসেছে, শ্মশান ও কবরস্থানেও মানুষকে জায়গা দেওয়া যায়নি, সেইসময় এই সম্পদ বৃদ্ধি। ক্রমবর্ধমান বৈষম্য নিয়ে সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিলিয়নেয়ারদের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় $৭২০ বিলিয়ন ডলার, যা জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ দরিদ্রের মোট সম্পদের চেয়েও বেশি। রিপোর্ট অনুসারে ভারতে ২০২১ সালে প্রায় ৮৪ শতাংশ মানুষের রোজগার কমেছে।
গত বছর দেশের চরম কোভিড সংকটের সময় দেশে নতুন করে ৪০ জন বিলিয়নেয়ার হয়েছেন। তার আগের বছরের ১০২ জনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশে এখন মোট বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ১৪২।
এই রিপোর্ট অনুসারে ভারতের ১০০ জন সম্পদশালী ২০২১ সালে তাঁদের সম্পদের সঙ্গে আরও ৫৭.৩ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ যুক্ত করেছেন। ভারতে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ৩০ শে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিলিওয়েনারদের সম্পদ ২৩.১৪ লক্ষ কোটি থেকে পৌঁছে গেছে ৫৩.১৬ লক্ষ কোটিতে। অন্যদিকে ২০২০ সালেই ভারতের ৪.৬ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমায় পৌঁছে গেছেন। রাষ্ট্রসংঘের হিসেব অনুসারে বিশ্বে দরিদ্র মানুষের তালিকায় সাম্প্রতিক সময়ে যত মানুষ যুক্ত হয়েছেন তার অর্ধেকের বেশি ভারতের অধিবাসী।
ভারতে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ৩০ শে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিলিওয়েনারদের সম্পদ ২৩.১৪ লক্ষ কোটি থেকে পৌঁছে গেছে ৫৩.১৬ লক্ষ কোটিতে।
মহামারী চলাকালীন বিশ্বব্যাপী সম্পদ বেড়েছে কারণ এই সময় স্টকের দাম থেকে শুরু করে ক্রিপ্টো এবং পণ্যদ্রব্য পর্যন্ত সবকিছুর মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে, বিশ্বের ৫০০ জন ধনী ব্যক্তি গত বছর তাদের মোট সম্পদে $১ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি যোগ করেছেন। অক্সফ্যামের রিপোর্ট অনুসারে ফ্রান্স, সুইডেন এবং সুইজারল্যান্ডের মোট বিলিয়নেয়ারের সংখ্যার চেয়ে ভারতে বিলিওনেয়ারদের সংখ্যা বেশি। অথচ ভারতে গত বছরের মে মাসে শহুরে বেকারত্ব বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। এর সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা।
অক্সফ্যামের রিপোর্ট অনুসারে ফ্রান্স, সুইডেন এবং সুইজারল্যান্ডের মোট বিলিয়নেয়ারের সংখ্যার চেয়ে ভারতে বিলিওনেয়ারদের সংখ্যা বেশি।
অক্সফ্যাম ইন্ডিয়ার সিইও অমিতাভ বেহার তাঁর বিবৃতিতে আরও জানিয়েছেন, বৈষম্যের কারণে বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২১০০০ মানুষের বা প্রতি ৪ সেকেন্ডে ১ জন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বেহার জানিয়েছেন, ২০২০ সালে মহামারীর সময় সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মহিলারা। তাঁদের রোজগার কমেছে প্রায় ৫৯.১১ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১৯-এর অনুপাতে ২০২০ সালে মহিলা কর্মীর সংখ্যা কমেছে প্রায় ১.৩ কোটি।
অক্সফ্যাম সুপারিশ করেছে, সরকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগের জন্য জনসংখ্যার সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশের ওপর ১ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করুক। এই রিপোর্ট আরও জানিয়েছে যে যে ভারতের ১০ জন ধনকুবেরের সম্পদের এই সামান্য অংশে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের শিশুদের স্কুল এবং উচ্চ শিক্ষায় অর্থ সংস্থানের জন্য যথেষ্ট।
বৈষম্যের কারণে বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২১০০০ মানুষের বা প্রতি ৪ সেকেন্ডে ১ জন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে হয়েছে, ফাঁস হওয়া ১১.৯ মিলিয়ন নথির সংগ্রহ প্যান্ডোরা পেপারস থেকে জানা গেছে – বিশ্বজুড়ে কর ফাঁকি দেবার জন্য ২৯ হাজার অফশোর কোম্পানি এবং ব্যক্তিগত ট্রাস্ট করা হয়েছে। যেখানে জানা গেছে ৩৮০ জনের বেশি ভারতীয়ের ২০০ বিলিয়ন টাকার বেশি পরিমাণ অর্থ মূল্যের অঘোষিত বিদেশী এবং দেশীয় সম্পদ রয়েছে৷
ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে, গত বছর ভারতে সবথেকে বেশি সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছে গৌতম আদানির। যা বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম। তিনি গত বছর তাঁর সম্পদে $৪২.৭ বিলিয়ন ডলার যোগ করেছেন, যা এখন প্রায় $৯০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। মুকেশ আম্বানির মোট সম্পদ ২০২১ সালে $১৩.৩ বিলিয়ন বেড়েছে এবং এখন তার মূল্য $৯৭ বিলিয়ন।
- with Agency Inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন