মঙ্গলবার দেশের শীর্ষ আদালত জোরের সঙ্গে জানিয়েছে যে, ভিক্ষুকরা শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অভাবে জীবিকা নির্বাহের জন্য রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়। এদিন শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয় - ভিক্ষাবৃত্তি বিষয়ে তারা কোনও অভিজাত দৃষ্টিভঙ্গি নিতে পারে না এবং এটি একটি আর্থ-সামাজিক সমস্যা।
বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি এম আর শাহের এক বেঞ্চ এদিন জানায়, "মানুষ শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অভাবে প্রাথমিক জীবিকা নির্বাহের জন্য ভিক্ষা করতে রাস্তায় নেমেছে"।
বেঞ্চ জোরের সঙ্গে জানায় - যে ভিক্ষা করা একটি আর্থ-সামাজিক সমস্যা, যা কোনোভাবেই আদালত নির্দেশ দিয়ে সমাধান করতে পারে না।
ভারতব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে গৃহহীন, ভিক্ষুক ও ভবঘুরেদের টিকা দেওয়া ও পুনর্বাসনের জন্য আইনজীবী কুশ কালরার দায়ের করা আবেদনের ভিত্তিতে বেঞ্চ কেন্দ্র এবং দিল্লি সরকারকে নোটিশ দিয়েছে।
কালরার প্রতিনিধিত্বকারী প্রবীণ আইনজীবী চিন্ময় প্রদীপ শর্মা কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে সামাজিক বিভাগ এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের সহায়তায় ভিক্ষুকদের "পুনর্বাসিত" করার জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারদের নির্দেশ চেয়েছিলেন।
মানুষকে রাস্তায় ভিক্ষা করা থেকে বিরত রাখার দিক নিয়ে বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করে জানায়, "মানুষ কেন রাস্তায় ভিক্ষা করে? মানুষ ভিক্ষা করে দারিদ্র্যের কারণে।" বেঞ্চ স্পষ্টভাবে জানায় যে, কেউ ভিক্ষা করতে চায় না এবং জানায়, "আমরা এক্ষেত্রে অভিজাতদের দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে ভাবলে হবেনা। কারণ, এঁদের কাছে ভিক্ষা করা ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প নেই।"
দেশজুড়ে ভিক্ষুকদের খাদ্য, আশ্রয় এবং কোভিড ভ্যাকসিনসহ প্রাথমিক চিকিত্সার সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়ে শর্মা শীর্ষ আদালতকে রাজ্য ও কেন্দ্রকে নির্দেশ জারি করার জন্য অনুরোধ জানান।
শীর্ষ আদালতের কাছে করা ওই আবেদনে বলা হয় "জীবন রক্ষার সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য উপায় হ'ল ভারতের প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করা ... রাষ্ট্রের এই বাধ্যবাধকতার অধীনে ... ট্র্যাফিক জংশন, বাজার এবং সরকারী স্থানে অবাধে চলাচলকারী ভিক্ষুকদের পুনর্বাসিত করা হোক, যাতে তাদের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে।
এই আবেদনে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে ট্র্যাফিক সিগন্যাল, বাজার এবং জনবহুল অঞ্চলে ভিক্ষুকদের মাধ্যমে কোভিড যাতে না ছড়িয়ে পড়ে তাই তাদের পুনর্বাসিত করা জরুরি। এর উত্তরে বেঞ্চ জানায় যে পুরো বিষয়টিই সমাজকল্যাণ নীতির সঙ্গে জড়িত।
বেঞ্চ আরও বলে: "তাত্ক্ষণিক ভাবে এঁদের টিকা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমরা ভারত সরকার এবং দিল্লি সরকারকে এই মানবিক পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা যেতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর নির্দেশ দিচ্ছি। সলিসিটার-জেনারেল এই বিষয়ে আদালতকে সহায়তা করতে পারবেন"।
বেঞ্চ উল্লেখ করেছে যে মহামারীর সময় ভবঘুরে এবং গৃহহীনরা চিকিত্সা সুবিধা পাওয়ার অধিকারী। আগামী দু'সপ্তাহ পরে এই বিষয়ে ফের শুনানি হবে বলেও এদিন আদালত জানিয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন