১৯৫০ সালে বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিকের উৎপাদন হত ২ মিলিয়ন টন। ২০১৫ সালে এসে সেই উৎপাদন দাঁড়ায় ৪১৯ মিলিয়ন টন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একদিকে প্লাস্টিকের উৎপাদন যেমন বেড়েছে তেমনই বেড়েছে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ। তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর ৩০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য পৃথিবীর বুকে জমা হচ্ছে।
বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকা ‘নেচার’-এর তথ্য অনুসারে প্রতি বছর প্রায় ১৪ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে সমুদ্রের বুকে। যার ফলে জীব বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। বিশেষত বর্জ্য প্লাস্টিকের কারণে সমুদ্রে থাকা প্রাণীজগতের চরম ক্ষতি হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রতি বছর গড়ে ১ লক্ষ সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে সমুদ্রে জমা হওয়া প্লাস্টিকের কারণে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, যদি এখনই এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয় সেক্ষেত্রে ২০৪০ সালের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে ২৯ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রের বুকে জমা হবে। এর সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিক যুক্ত করলে ২০৪০ সালে এই বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০০ মিলিয়ন টন।
এই প্রসঙ্গে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক জানাচ্ছে, পৃথিবীর বুকে প্লাস্টিক সম্পূর্ণভাবে বিয়োজিত হতে ৪০০ বছর সময় লাগে এবং বর্তমান সময়ে যে যে ধরণের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় তার ৯১ শতাংশ-এর পুনঃব্যবহার সম্ভব নয়। যা বিশ্ব পরিবেশের জন্য এক বড়ো সমস্যা।
বাণিজ্যিকভাবে ১৯০৭ সালে প্রথম প্লাস্টিক ব্যবহার শুরু হলেও ১৯৫২ সাল থেকে গণহারে প্লাস্টিক উৎপাদন শুরু হয়। তথ্য অনুসারে এই মুহূর্তে বিশ্বে প্রতি বছর সবথেকে বেশি প্লাস্টিক উৎপাদন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে প্রতিবছর ৪২ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়। যা চীন এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। যার ফলে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেই গড়ে প্রতি বছর ১.১৩ থেকে ২.২৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে এবং পরিবেশে মেশে।
২০১৯-এ এই প্রসঙ্গে রয়টার্স এক ইনফোগ্রাফিক প্রকাশ করেছিল। যেখানে দেখানো হয়েছিল প্রতি সপ্তাহে মানুষের শরীরে ৫ গ্রাম প্লাস্টিক প্রবেশ করে। যে হিসেবে ১০ বছরে ৫ পাউন্ড এবং জীবদ্দশায় ৪৪ পাউন্ড প্লাস্টিক মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, প্লাস্টিকের এই ব্যবহার ৮০ শতাংশ কমিয়ে ফেলা যেতে পারে - যদি প্লাস্টিক উৎপাদনে নিয়ন্ত্রণ আনা যায়, প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহে জোর দেওয়া যায় এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক উৎপাদনের জন্য বিনিয়োগ করা হয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন