ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে দু’ধাপ উঠলো ভারত। ১৮০ দেশের মধ্যে গতবছর ভারতের স্থান ছিল ১৬১। যা এবার দু’ধাপ উঠে হয়েছে ১৫৯। প্রতিবছর প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স প্রকাশ করে রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। যদিও দু’ধাপ ওপরে উঠলেও ভারতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার এই উত্থানকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে জানানো হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে আরএসএফ জানিয়েছে, “সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হিংসা, মিডিয়া মালিকানার কেন্দ্রীভবন এবং রাজনৈতিক যোগসূত্রের সাথে, "বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে" সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকটে রয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদের মূর্ত প্রতীক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বারা শাসিত৷
‘এশিয়া-প্যাসিফিক: প্রেস ফ্রিডম আন্ডার ইয়োক অফ অথরিটোরিয়ান গভর্নমেন্টস' শীর্ষক প্রতিবেদনেও ভারতের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে আরএসএফ জানিয়েছে, ভারতের দুই ধাপ অগ্রগতি “বিভ্রান্তিকর”। কারণ ভারতের সূচক সংখ্যা কমা সত্ত্বেও ওপরের দিকে থাকা দেশগুলির খারাপ অবস্থানের কারণে ভারত দু’ধাপ ওপরে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, ভারত সম্প্রতি আরো কঠোর আইন গ্রহণ করা সত্ত্বেও দুই ধাপ ওপরে উঠেছে। ভারতের সাম্প্রতিক অবস্থান এখনও গণতন্ত্রের অযোগ্য।
যদিও প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে দু’ধাপ উঠে এলেও এবারের প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ভারতের স্কোর ৩১.২৮। যা গত বছর ছিল ৩৬.৬৫। ভারত সম্পর্কে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ১.৪ বিলিয়ন বাসিন্দার ভারতে ১৯৭ মিলিয়ন বাড়িতে টিভি সেট আছে। দেশে প্রায় ৯০০টি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল রয়েছে, যার অর্ধেকেই সংবাদ প্রচারিত হয়। দূরদর্শন, যা এক পাবলিক টিভি সম্প্রচারকারী, ২৩টি ভাষায় কাজ করে এবং লক্ষ লক্ষ দর্শকদের কাছে পৌঁছায়।
ভারতে প্রায় ১,৪০,০০০টি বিভিন্ন ধরণের সংবাদপত্র ২০টিরও বেশি ভাষায় প্রকাশিত হয়, যার মধ্যে প্রায় ২০ হাজার দৈনিক সংবাদপত্র রয়েছে। তাদের মোট প্রচার সংখ্যা ৩৯০ মিলিয়ন কপিরও বেশি। অন্যদিকে অনলাইন সংবাদ, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া অল্পবয়সী জনগণের বিশেষ পছন্দের। যারা সংবাদের প্রধান উৎস হিসাবে প্রিন্ট মিডিয়াকে ছাড়িয়ে গেছে। রেডিওতে প্রচারিত খবরের ক্ষেত্রে অল ইন্ডিয়া রেডিও (এআইআর) ভারত সরকারের মালিকানাধীন এবং এই ক্ষেত্রে এখনও সরকারের একচেটিয়া প্রাধান্য।
২০২৪ সালে এখনও পর্যন্ত ভারতে ৯ জন সাংবাদিক এবং ১ জন সংবাদমাধ্যমের কর্মীকে আটক করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ২০২৪ সালে এখনও পর্যন্ত আটক হয়েছেন ৫৪৪ জন সাংবাদিক এবং ২৬ জন সংবাদমাধ্যমের কর্মী। এছাড়াও নিহত হয়েছেন ১২ জন সাংবাদিক।
প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে আলোচনায় ভারত সম্পর্কে আরএসএফ জানিয়েছে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন কারণে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। “প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বন্ধু রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রুপের প্রধান মুকেশ আম্বানি ৭০ টিরও বেশি মিডিয়া আউটলেটের মালিক, যেগুলি কমপক্ষে ৮০০ মিলিয়ন ভারতীয় অনুসরণ করে। ২০২২ সালের শেষের দিকে এনডিটিভি চ্যানেলের অধিগ্রহণ করেন গৌতম আদানি। যিনি একজন বিজনেস টাইকুন ও প্রধানমন্ত্রী মোদির ঘনিষ্ঠ এবং যে ঘটনা মূলধারার সংবাদমাধ্যমে বহুত্ববাদের সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয়।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতে "গোদি মিডিয়া"-র উত্থানও দেখা গেছে। এই বিশেষণ মিডিয়া আউটলেট যা জনসমর্থন এবং বিজেপি-পন্থী প্রচারকে উল্লেখ করে। চাপ ও প্রভাবের মাধ্যমে বহুত্ববাদী সংবাদমাধ্যমের পুরনো ভারতীয় ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। ভারতীয় সাংবাদিকরা, যারা সরকারের কড়া সমালোচক, তারা বিজেপি-সমর্থিত ট্রলারদের দ্বারা হয়রানিমূলক প্রচারের শিকার হয়।”
বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যম প্রসঙ্গে RSF জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশে সরকার এবং রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা।
ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে পাকিস্তান ১৫২ তম, শ্রীলঙ্কা ১৫, নেপাল ৭৪ এবং মালদ্বীপ ১০৬ তম স্থানে আছে। অন্য দিকে নিচের দিকে আছে আফগানিস্তান ১৭৮, বাংলাদেশ ১৬৫ এবং মায়ানমার ১৭১ তম।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন