Press Freedom Index: বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে বিপন্ন সংবাদমাধ্যম, ১১ ধাপ নেমে ভারতের স্থান ১৬১

রিপোর্ট অনুযায়ী, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, শুধুমাত্র উচ্চবর্ণের হিন্দু পুরুষরাই সাংবাদিকতায় সিনিয়র পদে বা মিডিয়া এক্সিকিউটিভ পদে অধিষ্ঠিত – যার ফলে মিডিয়ার বিষয়বস্তুতে পক্ষপাতদুষ্টতা প্রতিফলিত হয়।"
Press Freedom Index: বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে বিপন্ন সংবাদমাধ্যম, ১১ ধাপ নেমে ভারতের স্থান ১৬১
ছবি সৌজন্যে ডিজিপাব
Published on

ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রীডম ইনডেক্সে (World Press Freedom Index) আরও ১১ ধাপ নেমে গেল ভারত। এই নিয়ে একটানা দ্বিতীয় বছর প্রেস ফ্রীডম ইনডেক্সে নীচে নামলো ভারত। ২০২৩ সালের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রীডম ইনডেক্সে ১৮০ দেশের মধ্যে ভারতের স্থান দাঁড়িয়েছে ১৬১। গতবছর এই র‍্যাঙ্কিং-এ ভারতের স্থান ছিল ১৫০, ২০২১-এ ১৪২। অর্থাৎ মাত্র তিন বছরে ভারত নামলো ১৯ ধাপ।

বুধবারই ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রীডম ইনডেক্স প্রকাশ করেছে দ্য রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারস (RSF)। রিপোর্ট অনুসারে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হিংসা, রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদমাধ্যম, মিডিয়ার মালিকানার কেন্দ্রীকরণ – এই সবই প্রমাণ করে যে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে সংকটে রয়েছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, যে দেশে ২০১৪ সাল থেকে ভারতীয় জনতা পার্টি এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতীক নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন।

উল্লেখযোগ্যভাবে, সদ্য প্রকাশিত ২০২৩-এর ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রীডম ইনডেক্সে সাত ধাপ উঠে এসে পাকিস্তানের স্থান ১৫০। অন্যদিকে ১৯ ধাপ নেমে নেপালের স্থান হয়েছে ৯৫। ১১ ধাপ উঠে শ্রীলঙ্কার স্থান ১৩৫ এবং ৩ ধাপ নেমে মায়ানমারের স্থান ১৭৩।

বিশ্বে প্রতি বছর ৩ মে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রীডম ডে হিসেবে পালিত হয়। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রীডম ইনডেক্স-এ প্রতিটি দেশে সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার মাত্রা তুলে ধরে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ভারতে ১ লক্ষের বেশি সংবাদপত্র (৩৬ হাজার সাপ্তাহিক সহ) এবং ৩৮০টি টিভি নিউজ চ্যানেল রয়েছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৩ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত দেশে একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং ১০ জন সাংবাদিক কারাগারে রয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "ভারতে প্রতি বছর কাজ করতে করতে গড়ে তিন বা চারজন সাংবাদিক নিহত হন, ভারত সংবাদমাধ্যমের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলির মধ্যে একটি।"

সাংবাদিকরা পুলিশি হিংসা, রাজনৈতিক কর্মীদের অতর্কিত হামলা এবং অপরাধী গোষ্ঠী বা দুর্নীতিগ্রস্ত স্থানীয় কর্মকর্তাদের মারাত্মক প্রতিশোধ সহ সব ধরণের শারীরিক আক্রমণের মুখোমুখি হয় বলে এই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে, আরএসএফ রিপোর্টে বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘৃণা ও হত্যার আহ্বানের ভয়ঙ্কর প্রচার চালানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "এই ধরনের প্রচার আরও বেশি সহিংস হয় যখন তারা মহিলা সাংবাদিকদের টার্গেট করে, এমনকি তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে উস্কানি হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।"

এবারের তালিকায় নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড এবং ডেনমার্কের মতো নর্ডিক দেশগুলি শীর্ষ তিনটি স্থানে আছে এবং ভিয়েতনাম, চীন এবং উত্তর কোরিয়ার নাম সূচকে নীচের তিনটি দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে।

ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে পাঁচটি বিষয় আছে, যার ভিত্তিতে সূচকের গণনা করা হয় এবং তার ভিত্তিতে দেশগুলিকে স্থান দেওয়া হয়। এই পাঁচটি উপ-সূচক হল রাজনৈতিক সূচক, অর্থনৈতিক সূচক, আইন সূচক, সামাজিক সূচক এবং নিরাপত্তা সূচক।

ভারতের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগজনক পতন হয়েছে নিরাপত্তা সূচক বিভাগে, যেখানে ভারতের স্থান ১৭২৷ অর্থাৎ, এই ক্ষেত্রে ১৮০টির মধ্যে মাত্র আটটি দেশের স্থান ভারতের চেয়েও খারাপ৷ এই ক্ষেত্রে চীন, মেক্সিকো, ইরান, পাকিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন, ইউক্রেন এবং মায়ানমার ছাড়া বিশ্বের সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভারত সবার চেয়ে খারাপ। সবচেয়ে নিচের দিকে রয়েছে মায়ানমার।

আরএসএফ-এর মতে ভারতীয় নিউজরুমেও বৈচিত্র্যের অভাব রয়েছে। “বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, শুধুমাত্র উচ্চবর্ণের হিন্দু পুরুষরাই সাংবাদিকতায় সিনিয়র পদে বা মিডিয়া এক্সিকিউটিভ পদে অধিষ্ঠিত – যার ফলে মিডিয়ার বিষয়বস্তুতে পক্ষপাতদুষ্টতা প্রতিফলিত হয়। এছাড়াও, প্রাইম টাইমের টক শোতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১৫ শতাংশেরও কম মহিলা উপস্থাপকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।"

এই সমীক্ষায় যেসব দেশ ৮৫ থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে তাদের ‘ভালো’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। ৭০ থেকে ৮৫ পয়েন্ট প্রাপ্তদের ‘সন্তোষজনক’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ৫৫ থেকে ৭০ প্রাপ্তদের ‘সমস্যা সঙ্কুল’ বলা হয়েছে। ৪০ থেকে ৫৫ প্রাপ্তদের ‘কঠিন’ তকমা দেওয়া হয়েছে এবং ০ থেকে ৪০ প্রাপ্তদের ‘খুবই মারাত্মক’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এবারের সমীক্ষায় ভারতের প্রাপ্ত নম্বর ৩৬.৬২। অর্থাৎ সমীক্ষা বলছে ভারতে সংবাদমাধ্যমের অবস্থা ‘খুবই মারাত্মক’।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in