দুর্ঘটনা নাকি গণহত্যা? করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরে বিতর্ক দানা বাঁধলো সিপিআইএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যর এক ফেসবুক পোষ্ট ঘিরে। শনিবার সকালে বিশিষ্ট আইনজীবীর এই পোষ্টের পরেই বিতর্ক শুরু হয়ে যায় তাঁর ফেসবুক ওয়ালে।
শুক্রবার করমণ্ডল এক্সপ্রেস, যশবন্তপুর এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ির ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর শনিবার সকালে এক ফেসবুক পোষ্টে সিপিআইএম সাংসদ লেখেন, "এতবড়ো একটা গণহত্যার ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে দায় এড়ানো যাবে না। একবিংশ শতাব্দীর উন্নত বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগে তিনটি দ্রুতগামী ট্রেন মুখোমুখি সংঘর্ষ হবার পিছনে রয়েছে পরিচালন ব্যবস্থার চূড়ান্ত গাফিলতি। প্রধানমন্ত্রী নৈতিক দায় নিয়ে পদত্যাগ করুন।"
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যর এই মন্তব্যের পরেই তাঁর পোষ্টে ধেয়ে আসে একাধিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া। পাশাপাশি তাঁর মন্তব্যের পক্ষেও কীবোর্ড ধরেন একাধিক ব্যক্তি। জনৈক সাত্যকি সিনহা তাঁর পোষ্টের উত্তরে লেখেন, এখানে কোথায় মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে?? একটা ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পাশের ট্র্যাকে চলে যায় আর ৫ মিনিটের মধ্যে সেখান দিয়ে করমন্ডল যায়...একদম নিছক দুর্ঘটনা... কংগ্রেসের আমলে যেসব ক্ষেত্রে প্রকৃতই মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সেখানেও কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত ছিল তো? কমরেড আসলে আপনারা সব বিষয়েই রাজনীতি করেন বলে মানুষ আপনাদের গোল্লায় পাঠিয়েছে...আর আপনাকে পশ্চিমবঙ্গের শেষ রাজ্যসভার সিপিআইএমের সাংসদ হিসেবে মানুষ দীর্ঘ সময় মনে রাখবে।”
এর উত্তরে প্রবুদ্ধ ঘোষ লেখেন, বদ রাজনীতিকে আড়াল করার চেষ্টাটাও কিন্তু রাজনীতি - বদ, অকর্মাদের গোলামীর রাজনীতি। নেহাতই দুর্ঘটনা, কারো কোন দোষ নেই,থাকলে তা কর্মীদের, সরকারের নয়! রেলে কর্ম-সংস্থান সংকোচন, যথেচ্ছ প্রাইভেটাইজেশন, অকর্মণ্য স্বজন পোষণ - এগুলো শিকেয় তুলে রাখতে হবে? এদের বাঁচানোর গোলামীটা কি ভালো?
জনৈক দীপাঞ্জন সিনহা রায় লেখেন, “সবকিছুর মধ্যে রাজনীতি এনেই এই দেশটার সর্বনাশ করছে কিছু মানুষ। এখন এমন অবস্থা অম্লশূল হলেও কেউ কেউ রাজনীতির তাগিদে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে ফেলছেন।”
জনৈক সুগত দত্ত লেখেন, "আহা ওনারা হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সংসদ ভবন উদ্বোধন করলেন তো! ধিক্কার জানাই এই সরকারকে।"
জনৈক সুরজিত ঘোষ লেখেন, আপনাদের কি মানুষের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি ছাড়া আর কিছু কাজ নেই? যার উত্তরে কৌশিক পাইন লেখেন, “মানুষের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি কোথায় করলাম? রাজনীতির কাজ তো ৫৬ ইঞ্চি করেন। পুলওয়ামা কান্ডে আমাদের জওয়ানদের মৃত্যু নিয়ে ভোট করে নিলেন সেটা রাজনীতি ছিল না? আমরা সেদিন বলেছিলাম ঐ জওয়ানদের মৃত্যু সরকারের গাফিলতির ফলে ঘটেছে ওই দুর্ঘটনা, সেদিন একইভাবে কিছু ভক্ত, কিছু মানুষ আমাদের বলেছিলেন মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করবেন না। আজ পরিষ্কার হয়ে গেছে সেদিন কেন ঐ ঘটনা ঘটেছিল।”
উল্লেখ্য, গতকালের ওই দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৬১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যে সংখ্যা আরও বাড়বে বলে অনেকেরই আশংকা। আহতের সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে। যেভাবে একসঙ্গে তিনটি ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে তা এক কথায় নজিরবিহীন বলেও অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন