করমন্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর ক্রমশই জোরালো হচ্ছে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের পদত্যাগের দাবি। এখনও পর্যন্ত এই দুর্ঘটনায় ২৩৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যে সংখ্যা আরও বাড়বে বলে অনেকেরই আশংকা। আহতের সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে। যেভাবে একসঙ্গে তিনটি ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে তা এক কথায় নজিরবিহীন বলেও অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে দিয়ে রেলমন্ত্রী বৈষ্ণব ইতিমধ্যেই এক উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে দুর্ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও বিরোধীদের দাবি, যেভাবে সিগন্যালিং-এর ত্রুটির কারণে চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেস, হাওড়াগামী যশবন্তপুর এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে তাতে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিৎ। অতীতেও এই ধরণের পদত্যাগের একাধিক নজির আছে।
যদিও এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয় ঠিক কীভাবে তিনটি ট্রেন একই সময়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যে ৬.৫৫ মিনিট নাগাদ প্রথম হাওড়ামুখী যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ৭টা নাগাদ চেন্নাইমুখী করমন্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে সরাসরি যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত বগিতে ধাক্কা মারে এবং তারপরেই অন্য একটি মালগাড়ির সঙ্গে করমন্ডল এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ হয়।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে সিপিআই নেতা বিনয় বিশ্বম এক ট্যুইট বার্তায় জানিয়েছেন, সরকার বিলাসবহুল ট্রেনের দিকে নজর দিয়েছে। যদিও ট্রেনের ট্র্যাক এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার দিকে কোনো নজর নেই। ওড়িশায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা তারই প্রমাণ। রেল মন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিৎ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক তেহসীন পুনাওয়ালা এক ভিডিও সহ নিজের ট্যুইটে লেখেন, মাননীয় রেলমন্ত্রী এখানে ‘কবচ’ নিয়ে ভাষণ দিচ্ছেন এবং দাবি করছেন এই সুরক্ষা ব্যবস্থা ইউরোপের সেরা নিরাপত্তা ব্যবস্থার মত, যাতে রেল দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে। কিন্তু এখানে একটি বা দুটি নয়। একসঙ্গে তিনটি ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
ওড়িশায় তিনটি ট্রেনের একসঙ্গে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হওয়াতে প্রশ্ন তুলে বহু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের 'কবচ' নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যাখ্যা করার পুরনো ভিডিও শেয়ার করেছেন। প্রসঙ্গত, ‘কবচ’ আসলে ট্রেনের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণকারী সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং ভারতীয় রেলওয়ের নেটওয়ার্ক জুড়ে বর্তমানে ‘কবচ’ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রযুক্তিগত কাজ চলছে।
দাবি মত, যখন একজন ট্রেন চালক কোনো সিগন্যাল অমান্য করেন (Signal Passed at Danger - SPAD), যা ট্রেন সংঘর্ষের প্রধান কারণ, ‘কবচ’ সুরক্ষা সাথে সাথেই বিষয়টিতে সতর্কবার্তা দেয়। নির্ধারিত দূরত্বের মধ্যে একই লাইনে অন্য ট্রেন এসে গেলে ‘কবচ’ সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ট্রেন চালককে সতর্ক করা যেতে পারে, ব্রেক নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে এবং ট্রেনটিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে থামানো যেতে পারে বলেও দাবি করা হয়েছে। রেলমন্ত্রীর দাবি ছিল, এই প্রযুক্তি বা পদ্ধতি প্রয়োগ করলে রেল দুর্ঘটনা নির্মূল হয়ে যেতে পারে।
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে রাজ্যসভায় ‘কবচ’ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে রেলমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ১,৪৪৫টি রুটে ইতিমধ্যে পর্যায়ক্রমে ‘কবচ’ সুরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। মাস পাঁচেক আগে রেলমন্ত্রী জানা, ‘‘এখন দিল্লি-মুম্বই এবং দিল্লি-হাওড়া করিডরে (৩,০০০ কিলোমিটার) কাজ চলছে।” যদিও দক্ষিণপূর্ব রেলের দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসে ‘কবচ’ সুরক্ষা ব্যবস্থা আদৌ ছিল কি না তা জানা যায়নি।
গতকালের দুর্ঘটনার পর প্রশ্ন উঠে গেছে ‘কবচ’ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই। ছড়িয়েছে বিভ্রান্তিও। কবচ প্রযুক্তিতে মুখোমুখি ট্রেন সংঘর্ষ আটকানোর কথা বলা হলেও কোনো ট্রেনের পেছনে গিয়ে ধাক্কা মারা এই প্রযুক্তিতে আদৌ রোধ করা যাবে কিনা কিনা সেই বিষয়েও স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন