রাজস্থান কংগ্রেসের গোষ্ঠী রাজনীতির কারণে ক্রমশই অস্থির হচ্ছে রাজ্যের পরিস্থিতি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এর ফলে রাজ্য প্রশাসনও প্রভাবিত হচ্ছে। এই মুহূর্তে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনায় অথবা বেকারত্ব সূচকে শীর্ষে আছে রাজস্থান। পাশাপাশি রাজ্যে দুর্নীতির ঘটনায় ক্রমবর্ধমান। অতি সম্প্রতি উদয়পুরের ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও।
রাজ্যের গোয়েন্দা দপ্তরের ব্যর্থতা এবং পুলিশের গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তড়িঘড়ি রাজ্য সরকারকে ৩২ জন আইপিএস অফিসারকে বদলি করতে হয়েছে। অভিযোগ, যখন দর্জিকে হুমকি দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছিল, তখনও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দর্জি কানহাইয়া লাল হুমকি পাওয়ার অভিযোগে অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সভাপতি সতীশ পুনিয়া বলেছেন যে রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি শাসক দলের বিধায়কদের ওপর নজর রাখতেই ব্যস্ত থাকে এবং তাই তাদের অন্যান্য বিষয়গুলি দেখার সময় নেই।
সাম্প্রতিক রাজ্যসভা ভোটের সময় কংগ্রেস বিধায়কদের একটি পাঁচতারা হোটেলে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছিল এবং তাদের জন্য একটি গোয়েন্দা দল নিযুক্ত করা হয়েছিল। যাতে কোনোভাবেই বিরোধীরা শাসক বিধায়কদের ধারে কাছে পৌঁছাতে পারে।
এর আগে শচীন পাইলট শিবিরের বিদ্রোহের সময়েও কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছিল। এই সময় এসওজি পাইলট শিবিরের বিরুদ্ধে মামলা করে। যা পরে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। গেহলট সরকারের আমলে এটাই প্রথমবার নয়, যখন কংগ্রেসকে নিজেদের বিধায়ক, সহকর্মীদেরও সন্দেহ করতে দেখা গেছে।
মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট প্রকাশ্যেই তাঁর প্রাক্তন ডেপুটি সিএম শচীন পাইলটের উদ্দেশ্যে অভিযোগ এনেছেন। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সরকার ফেলার জন্য ২০২০ সালে বিদ্রোহের পরিকল্পনা করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের সাথে হাত মিলিয়ে ছিলেন পাইলট। রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিলাল ধারিওয়াল নিজ দলের বিধায়ক এবং প্রাক্তন ডেপুটি সিএমকে সন্দেহ করে গেহলটের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
এছাড়াও, রাজ্যের প্রবীণ বিধায়ক রাজেন্দ্র সিং বিধুরিকে মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয়। যার পর বিধুরি রাজ্য সরকারকে অদক্ষতার দায়ে অভিযুক্ত করেন। চিতোরগড়ের বেগুনের বিধায়ক বিধুরী জানান, "কোটা থেকে এক ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার বিরুদ্ধে ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছেন। আমি তিন মাস আগে এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলাম, কিন্তু সরকার বা চিতোরগড়ের পুলিশ কিছুই করেনি। যখন একজন বিধায়ক নিরাপদ নয় তাহলে রাজস্থানের মানুষ কিভাবে নিরাপদ থাকবে?”
বর্তমানে পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠেছে যে, কংগ্রেস নিজস্ব বিধায়কদের আক্রমণ থেকে বাদ যাচ্ছেনা। সম্প্রতি কোটা জেলার সাঙ্গোদ বিধানসভা আসনের বিধায়ক ভরত সিং-এর মুখেও কংগ্রেস সরকারের সমালোচনা শোনা গেছে। যিনি অগ্নিপথের প্রতিবাদে ৪ বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করার জন্য নিজের সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে গেহলটকে চিঠি লেখেন। চিঠিতে প্রাক্তন মন্ত্রী বলেন, যদি এই জাতীয় মামলা প্রত্যাহার করতে হয় তবে রাজ্যে জনসাধারণের বিরুদ্ধে নথিভুক্ত সমস্ত মামলাও প্রত্যাহার করা উচিত।
কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও প্রকাশ্যে এসেছে যখন রাজ্যের মন্ত্রী ধারিওয়াল সম্প্রতি দল সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন এবং জিজ্ঞাসা করেছেন দুটি নির্বাচনে হারের পরেও কেন শিক্ষামন্ত্রী বি ডি কাল্লাকে কংগ্রেস প্রার্থী করা হয়েছিল।
শীর্ষ স্তরে এই জাতীয় সমস্যাগুলি পর্যবেক্ষণ করার মতো কোনও শক্তিশালী নেতৃত্ব না থাকায় তাদের নিজের সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা বিধায়কদের তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
অবশেষে, ভুক্তভোগী হল রাজ্যের সাধারণ মানুষ। যারা কংগ্রেসের ওপর আস্থা রেখে সরকার গঠনের জন্য ভোট দিয়েছে। তারা চুপচাপ বিধায়ক মন্ত্রীদের সমস্ত কার্যকলাপের দিকে নজর রাখছেন এবং হয়তো বা আগামী ডিসেম্বরে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন