সমলিঙ্গ সম্পর্কে স্বীকৃতি দিলেও সমলিঙ্গ বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দিল না সুপ্রিম কোর্ট। এই বিষয়ে রায় শোনাতে গিয়ে মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংগঠনিক বেঞ্চ জানিয়েছে, “জীবনসঙ্গী নির্বাচন করা একজনের জীবনের পথ বেছে নেওয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেউ কেউ এটাকে তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বলে মনে করতে পারেন। এই অধিকার ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে জীবন ও স্বাধীনতার অধিকারের মূল।” সমলিঙ্গ বিবাহের স্বীকৃতি নিয়ে আইনসভার কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
গত মে মাসে সমকামী বিবাহের মামলায় টানা ১০ দিনের শুনানি পর্বের শেষে ১১ মে রায়দান স্থগিত রাখে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। মঙ্গলবার সেই স্থগিতাদেশ পর্বের শেষ দিনে রায় পড়ে শোনাতে গিয়ে দেশের প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড় জানান, “বিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কোনও অটল, অনড় বিষয় নয়। এতেও বিবর্তন আসতেই পারে। কিন্তু আইন না থাকলে কোনও বিয়েই স্বীকৃতি পেত না। তাই ব্যক্তিগত স্তরেও কোনও কাজকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখা উচিত নয়।” এদিন শীর্ষ আদালতের সাংগঠনিক বেঞ্চের অন্যান্য সদস্য বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল, বিচারপতি হিমা কোহলি, বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভট্ট এবং বিচারপতি এস নরসিংহও একই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
এদিন প্রধান বিচারপতি আরও জানান, “সমকামী যেকোনো মানুষকেই হেনস্থা করা বন্ধ করতে হবে। কাউকে তার যৌন পরিচয় জানার জন্য থানায় তলব করা যাবে না। তারা বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এলে সেখানে ফেরানোর জন্য তাঁদের আর জোর করা যাবে না। এমনকি সমকামী কোনও মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করার আগে পুলিশকে আগে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।” তবে এত পর্যবেক্ষণের পরেও সমলিঙ্গ বিবাহকে আইনি স্বীকৃতির ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চায়নি আদালত। সমলিঙ্গ সম্পর্কে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্রকে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
এদিন বিচারপতি এস নরসিংহ তার পর্যবেক্ষণে বলেন, “বিয়ের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া সাংবিধানিকভাবে অনুমোদনযোগ্য নয়।” পাশাপাশি, বিচারপতি রবীন্দ্র ভট্টও জানান, “বিশেষ আইন ছাড়া কোনও বিয়ের স্বীকৃতি সম্ভব নয়। আর বিচারব্যবস্থা বিয়ের বিষয় নিয়ে কোনও আইন আনতে পারে না। এটা আইনসভার কাজ।” পাশাপাশি, সমকামিতা বিষয়টিকে ‘শহুরে বিষয়’ নয় বলেও উল্লেখ করেছে আদালত। প্রসঙ্গত, সমলিঙ্গের বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা করে কেন্দ্রের মোদী সরকারের তরফে সমকামিতাকে ‘শহুরে অভিজাত সমাজের ভাবনা’ বলে দেগে দেওয়া হয়।
২৫ নভেম্বর, ২০২২ – দুই সমকামী দম্পতি শীর্ষ আদালতের কাছে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুসারে সমলিঙ্গে বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করে।
১৪ ডিসেম্বর, ২০২২ – সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে নোটিশ জারি করে।
৬ জানুয়ারি, ২০২৩ – দেশের বিভিন্ন উচ্চ আদালতে সমলিঙ্গে বিয়েতে সম্মতি চেয়ে যত মামলা ছিল সব মামলা শীর্ষ আদালতে স্থানান্তরিত করা হয়।
১২ মার্চ, ২০২৩ – কেন্দ্রের পক্ষ থেকে শীর্ষ আদালতের কাছে হলফনামা পেশ করা হয়।
১৩ মার্চ, ২০২৩ – শীর্ষ আদালত এই মামলা সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠায়।
১ এপ্রিল, ২০২৩ – জামিয়ৎ উলেমা ই হিন্দ-এর পক্ষ থেকে এই আবেদনের বিরোধিতা করা হয়।
৬ এপ্রিল, ২০২৩ – দিল্লি কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ডস রাইটস সমলিঙ্গে বিয়েতে সমর্থন জানায়।
১৫ এপ্রিল, ২০২৩ – শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে এই মামলার জন্য পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ তৈরি করা হয়। এই বেঞ্চে ছিলেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি এস কে কাউল, বিচারপতি এস আর ভাট, বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি পি এস নরসিংহম।
১৭ এপ্রিল, ২০২৩ – কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আদালতের কাছে কিছু প্রশ্ন তোলা হয়,
১১ মে, ২০২৩ - প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ এই মামলার রায় সংরক্ষিত রাখে।
১৭ অক্টোবর, ২০২৩ – মামলার রায় দান।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন