জেলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এই অভিযোগে পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই আবেদন জানাচ্ছিল। কিন্তু তাতে আমল দেয়নি আদালত। একাধিকবার জামিনের আবেদনের উত্তরও পাওয়া যায়নি। অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। শেষপর্যন্ত গত ৩০ মে পাঠানো হয় মুম্বইয়ের বেসরকারি হাসপাতালে। দীর্ঘ একমাস যমে-মানুষে টানাটানির পর দেশের আদিবাসী অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের অন্যতম প্রধান মুখ স্ট্যান স্বামী সোমবার মুম্বইয়ের হাসপাতালে দুপুর দেড়টা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ছোট থেকেই ভেদাভেদহীন সমাজের স্বপ্ন ৮৪ বছরের সমাজকর্মী ফাদার স্ট্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তর। তার বিরুদ্ধে কখনও মাওবাদী যোগ, কখনও দেশদ্রোহিতার অভিযোগ উঠেছে। আর তার জেরে তাঁকে জেলবন্দি হতে হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে পাল্টা ক্ষোভ প্রকাশ করে গিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে ভীমা কোরেগাঁও মামলায় নাম জড়ায় স্ট্যানের।
গত বছর ৮ অক্টোবর রাঁচি থেকে এনআইএ গ্রেফতার করে স্ট্যান স্বামীকে। তারপর থেকে মুম্বইয়ের তালোজা জেলে বন্দি ছিলেন জেসুট যাজক। ক্ষয় হতে থাকে শরীরে। আগেই থাবা বসিয়েছিল পারকিনসন্স, সঙ্গে করোনাও। এরপরও সরকারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তোপ দেগে স্বামী বলেছিলেন, জেলেই পচে মরব তবু যাব না হাসপাতালে। পরে জোর করে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপরও তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আনা হয়। ইউএপিএ আইনে অভিযোগ আনা হয়। দেশদ্রোহীর তকমাও জোটে।
তা নিয়েই তা এক বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের বিশেষ সাক্ষাতকারে স্ট্যান স্পষ্ট বলেছিলেন, 'আপনি এই মুহুর্তে একজন দেশদ্রোহীর সঙ্গে কথা বলছেন। সরকার আমাকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছে। কিন্তু, আমি সরকারের ভুল নীতির বিরুদ্ধে জনসংঘর্ষে শমিল। মানুষকে জাগিয়ে তুলছি। তাই আমাকে অপরাধী বলে দেওয়া হয়েছে।'
ছোট থেকেই স্ট্যান স্বামীর একরোখা মনোভাব আদিবাসীদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে। তারপর নানা আন্দোলনে জড়ালেও ছাত্র জীবনেই আদিবাসীদের সঙ্গে প্রথম আত্মীয়তা গড়ে ওঠে। বেঙ্গালুরুর ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেসে থাকাকালীনই আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি সম্বন্ধে আগ্রহী হন স্ট্যান। মিশে গেলেন আদিবাসীদের সঙ্গে। হো ভাষা শিখলেন। সব দেখে বুঝলেন বঞ্চনা, শোষণের যন্ত্রণ। তারপর থেকে তিন দশক কাজ করে গিয়েছেন তাঁদের জন্যই।
১৯৯৬ সালে ঝাড়খণ্ড অর্গানাইজেশন এগেইনস্ট ইউরেনিয়াম রেডিয়েশন বা জোয়ার আন্দোলনে যোগ দেন স্ট্যান। সেই আন্দোলনে জয়ী হন তাঁরা। এরপর ২০০১ সালে রাঁচিতে বাগাইচায় জেসুইট চার্চের ক্যাম্পাসে তৈরি করেন ট্রেনিং সেন্টার। আদিবাসী ছেলেমেয়েদের অন্যায়, অত্যাচার, উচ্ছেদের বিরোধিতায় আর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক শিক্ষার হাতে কলমে পাঠ দিতে থাকেন। দেশজুড়ে যত বেড়েছে আদিবাসী নিপীড়ন, ততই বেড়েছে স্ট্যান স্বামীর জেদ। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সেভাবেই কাটালেন তিনি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন