গোটা দেশ যখন আজ আলোর রোশনাই, শব্দবাজিতে মেতে থাকবে, দীপাবলি পালন করবে তখন তা থেকে নিজেদের বিরত রাখবেন তামিলনাড়ুর দুটি গ্রামের বাসিন্দারা। শীতের মরসুমে এলাকায় আসা পরিযায়ী পাখিদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, তাই কয়েকদশক ধরে তামিলনাড়ুর শিবগঙ্গা জেলার কোল্লুকুড়িপট্টি এবং ভেটাঙ্গুড়িপট্টির বাসিন্দারা দীপাবলিতে এই আত্মত্যাগ করে আসছেন। প্রসঙ্গত, এই ভেট্টাঙ্গুড়িতে পাখিদের অভয়ারণ্য রয়েছে, যেখানে এই সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে কয়েক হাজার পাখি আসে।
কোল্লুকুড়িপট্টির এক পঞ্চায়েত সদস্য সগুনন্দন আইএএনএস-কে জানিয়েছেন, "আমাদের বাবা-কাকারা আমাদের বলেছিলেন দীপাবলির সময় আমরা যেন বাজি না ফাটায়। কারণ বাজির শব্দ এখানে আসা পরিযায়ী পাখিদের বিরক্ত করবে। কয়েক দশক ধরে এই নিয়ম চলে আসছে এখানে। আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে একথা জানাবো। এভাবে চলতে থাকবে। এতে নতুন কিছু নেই।"
স্থানীয় ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার মাথিভান্নান জানিয়েছেন, "এই দুই গ্রামের বাসিন্দারা গত কয়েক দশক ধরে দীপাবলিতে বাজি ফাটাননা। এঁরা পরিযায়ী পাখিদের বিশেষ অতিথি মনে করেন। অতিথি এঁদের কাছে ভগবানের সমান।"
তিনি জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, চীন এবং মায়ানমার থেকে ২৩ প্রজাতির প্রায় ১৫ হাজার পাখি শীতের মরসুমে এই অভয়ারণ্যে আসে। চার মাসের বেশি সময় তারা এখানে থাকে। এখানেই বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে তারা। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি প্রজাতির পাখি অভয়ারণ্যে এসে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন তিনি যার মধ্যে রয়েছে সারস, হেরন বা ক্রৌঁচ, ওপেন বিল বক, জলমুরগি, ইন্ডিয়ান হোয়াইট আই, কালো রঙের মাথাযুক্ত আইবিস ইত্যাদি।
প্রতিবছরই নিয়ম করে দীপাবলির পর বায়ুতে দূষণের মাত্রা বাড়ে। দূষণ প্রতিরোধে সরকার, প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা সচেতনতামূলক প্রচার চালালেও বিশেষ কাজ হয়না। কিন্তু এই সময় দাঁড়িয়েই বছরের পর বছর দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে তামিলনাড়ুর অখ্যাত দুই গ্রাম। তথাকথিত পিছিয়ে পড়া অখ্যাত এই দুটি গ্রামের বাসিন্দারা পাখিদের স্বার্থে, পরিবেশের স্বার্থে কয়েক দশক ধরে এই আত্মত্যাগ করে আসছে। সুগুনন্দন জানিয়েছেন, এমনকী তাঁদের এলাকার ছোট ছোট শিশুরাও কখনও বাজি ফাটানোর জন্য জেদ করে না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন