বর্তমানে ভারতে সফল ব্যবসায়ী তথা ধনীতম ব্যক্তিদের নিয়ে কথা বললে উঠে আসে রতন টাটা, মুকেশ আম্বানি, গৌতম আদানিদের নাম। তবে স্বাধীনতার একশো বছর আগে ভারতে ধনীতম ব্যবসায়ী ছিলেন একজনই। তিনি বীরজি ভোরা। জানা যায়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও বীরজি ভোরার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন। এমনকি মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব এবং শাহজাহানকেও তিনি সাহায্য করেছিলেন।
১৫৯০ সালে জন্ম বীরজির। মোঘল আমলে সুরাটের ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি। সেই সময় তাঁকে ‘বণিক রাজপুত’ও বলা হত। সেই সময় বীরজিকে বিশ্বের ধনীতম ব্যবসায়ী হিসাবে বর্ণনা করেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। অবিভক্ত ভারতে পাইকারির ব্যবসা করতেন বীরজি। কোনও পণ্য বিক্রি করার আগে তিনি সেই পণ্যের সমস্ত স্টক নিজে ক্রয় করে নিতেন। তারপর চড়া দামে তা বাজারে বিক্রি করতেন। পাশাপাশি, সুদে টাকা ধারও দিতেন। সুরাটে সেই সময় যে সমস্ত পণ্য আমদানি হত, তাতে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল বীরজির। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল প্রবাল, আফিম, মশলা। এই সমস্ত পণ্য কিনে চড়া দামে বিক্রি করে লাভবান হতেন বীরজি।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করতেন তিনি। সুরাটে ডাচদের থেকে মরিচ কিনতেন বীরজি। ইংরেজদের থেকে কিনতেন প্রবাল। পরে ইংরেজদের কাছে মরিচ, এলাচ, হলুদ ইত্যাদি বিক্রি করতেন। ব্রিটিশদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে বীরজির প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। তবে দু’তরফে সম্পর্ক ভাল ছিল।
১৬১৯ থেকে ১৬৭০ সালের কাছাকাছি সময় পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মূল অর্থদাতা ছিলেন বীরজি। এক পর্যায়ে তিনি কোম্পানিকে ২ লক্ষ টাকা ধার দেন বলে জানা যায়। বর্তমানে এই টাকার পরিমাণ অল্প শোনালেও, সেই সময় এই টাকার মূল্য ছিল অনেকটাই। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ও বীরজির মধ্যে উপহার দেওয়া-নেওয়াও হত।
মোঘল প্রশাসনের সঙ্গেও বীরজির সুসম্পর্ক ছিল। মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবকে সাহায্য করেছিলেন বীরজি। শোনা যায়, ভারতের দাক্ষিণাত্য অঞ্চল দখলের লড়াইয়ের সময় আর্থিক সমস্যায় পড়েছিলেন ঔরঙ্গজেব। সেই সময় টাকার জন্য বীরজির কাছে দূত পাঠিয়েছিলেন মোগল সম্রাট। শুধু ঔরঙ্গজেব নন, মোগল সম্রাট শাহজাহানকেও সাহায্য করেছিলেন বীরজি। শাহজাহানকে ৪টি আরবি ঘোড়া পাঠিয়েছিলেন তিনি।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নথিতে উল্লেখ করা আছে, সেই সময় বীরজির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা, মুদ্রাস্ফীতির হিসেব ধরলে মুকেশ আম্বানির সম্পত্তির থেকেও প্রায় কয়েকগুণ বেশি।
তবে ব্যর্থতাও এসেছে বীরজির জীবনে। ১৬৬৪ সালে সুরাটে একবার উপস্থিত হন ছত্রপতি শিবাজি। সেই সময় মারাঠা সৈনিকরা তাঁর প্রচুর টাকা, সোনা-হিরে-মণি-মুক্তো সমস্ত লুঠ করে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর বাড়ি, গুদাম একদম ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। এরপর ফের তিনি উঠে দাঁড়ানো শুরু করেন। কিন্তু এর কয়েক বছর পর ১৬৭০ সালে জীবনাবসান হয় বীরজির।