উত্তরপ্রদেশে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে বিপর্যয়ের পরেই ছোটো শরিকদের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলো বিজেপির অন্দরে। রাজ্যে এনডিএ-র ছোটো শরিকরা নির্বাচনে কী ভূমিকা পালন করেছেন, বা কত ভোট পেয়েছেন তাও খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের এক অংশ।
উত্তরপ্রদেশে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের এক বড়ো অংশের অভিমত, সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে ছোটো শরিকদের সঙ্গে নিয়ে কোনও লাভ হয়নি বিজেপির। যদিও এই শরিকরা বিভিন্ন কেন্দ্রে বিজেপির নিজস্ব ভোটারদের ভোট পেয়েছেন।
উদাহরণ হিসেবে ওমপ্রকাশ রাজভরের সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টি (এসবিএসপি) পূর্ব উত্তরপ্রদেশে কোনও রাজভর ভোট পায়নি। ওমপ্রকাশ রাজভরের ছেলে অরবিন্দ রাজভর ঘোষি কেন্দ্র থেকে পরাজিত হয়েছেন।
রাজ্যের বিজেপি সরকারের মন্ত্রী অনিল রাজভর এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, রাজভর মানুষরা কেউ এসবিএসপি-কে ভোট দেয়নি। ঘোষি কেন্দ্রে অরবিন্দ রাজভর যা ভোট পেয়েছেন তার সবটাই এসেছে বিজেপির নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্ক থেকে। এমনকি ওমপ্রকাশ রাজভরের নিজের কেন্দ্র জহুরাবাদেও তিনি পরাজিত হয়েছেন।
কিছুদিন আগেই বিধানসভায় মাত্র ৬টি আসন হওয়া সত্ত্বেও এসবিএসপি-কে বিধান পরিষদে একটি আসন দেওয়া হয়েছে।
একইভাবে আলোচনায় উঠে এসেছে নিষাদ পার্টির নাম। সন্ত কবীর নগর কেন্দ্রে নিষাদ পার্টির প্রধান সঞ্জয় নিষাদ তাঁর ছেলে প্রবীণ নিষাদের পরাজয় ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে প্রবীণ নিষাদ বিজেপির পদ্মফুল চিহ্ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জয়ী হতে পারেননি। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় নিষাদ পার্টির বিধায়ক সংখ্যা ৬।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্যের এক বিজেপি নেতা এবং মন্ত্রী এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, সঞ্জয় নিষাদ তাঁর ছেলে শ্রবণ নিষাদকে বিজেপির প্রতীকে চৌরিচৌরা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত করিয়েছেন। বিধান পরিষদে তাঁর দলকে একটি আসন দেওয়া হয়েছে। সঞ্জয় নিষাদ নিজে রাজ্যের একজন মন্ত্রী এবং তাঁর আরেক ছেলে লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। তিনি কী আমাদের বলবেন কত নিষাদ ভোট তিনি এনডিএ-র পক্ষে আনতে পেরেছেন?
তিনি আরও বলেন, আমাদের দল স্পষ্ট কোনও কারণ ছাড়াই এইসব দলকে সঙ্গে নিয়ে চলছে। এই শরিকরা বিজেপির কাছ থেকে সমস্ত রকম সুবিধা নিচ্ছে এবং নেতৃত্বের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে। তারা যা যা পেয়েছে আদৌ তার যোগ্য নয়। আরও দেরী হয়ে যাবার আগে আমাদের অবিলম্বে এঁদের বিষয়ে আরও একবার গুরুত্ব সহকারে ভাবা দরকার।
বিজেপির অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর এক বিধায়ক এই প্রসঙ্গে বলেন, এবারের নির্বাচনে আপনা দল দুই আসনে লড়াই করে একটি আসনে জিতেছে। মির্জাপুর থেকে অনুপ্রিয়া প্যাটেল জয়ী হলেও রবার্টসগঞ্জ কেন্দ্র থেকে পরাজিত হয়েছেন রিঙ্কি কোল। অনুপ্রিয়া প্যাটেলকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করা হয়েছে এবং তাঁর স্বামী উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী। তিনি রাজ্য বিধান পরিষদের সদস্য। রাজ্যে এই দলের ১৩ জন বিধায়ক আছে। যদিও এঁরা কোনও কুরমি ভোট বিজেপির পক্ষে আনতে পারেনি। অথচ কুরমিরা চিরকালীন বিজেপির সমর্থক। কাজেই আপনা দলকে সঙ্গে নিয়েও বিজেপির কোনও লাভ হচ্ছে না।
বিজেপি নেতৃত্বের অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সদ্য এনডিএ-তে যোগ দেওয়া আরএলডি-কে নিয়েও। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কথায় আরএলডি-কে যে দুটি আসন দেওয়া হয়েছিল, বাগপত এবং বিজনৌর - সেই দুই আসনে তারা জিতেছে। কিন্তু এই দুই আসনে জয়ী হলেও জাঠদের কোনও সমর্থন আরএলডি জোগাড় করতে পারেনি। যদি তা পারত তাহলে কৈরানা আসনে সমাজবাদী পার্টির কাছে বিজেপির পরাজয় হত না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির কিছু নেতৃত্ব আইএএনএস-কে জানিয়েছেন, দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের এই বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করা উচিত। কারণ যাদের সঙ্গে নিয়ে চলে লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হচ্ছে আগামী দিনে আদৌ সেইসব শরিকদের সঙ্গে রাখা হবে কিনা তা নিয়েও ভাবনা চিন্তা করা উচিত।
এক বিধায়ক জানিয়েছেন, এঁরা সবরকম সুযোগ সুবিধা নিলেও এঁদের কাছ থেকে বিজেপির কোনও লাভ হচ্ছে না। নির্বাচনী ফলাফলের বিস্তারিত সমীক্ষা থেকে এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে এইসব শরিকদের বিষয়ে আরও গুরুত্ব দিয়ে ভাবনাচিন্তা করা উচিত।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন