সামনে ভোট। জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের বিগত পাঁচ বছরের কাজকর্মের হিসেব নিকাশের ভিত্তিতে ভোট হওয়া উচিৎ। নির্বাচনী প্রার্থীদের আস্থা রাখা উচিৎ মানুষের ওপর, মানুষের রায়ে। যদিও বাস্তব সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে। মানুষের ওপর আস্থা রাখার পরিবর্তে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রার্থীরা এখন জ্যোতিষ, পুরোহিতদের দরজায় দরজায় হত্যে দিচ্ছেন। মনোনয়ননের সঠিক সময়, প্রচার শুরুর সময়, এমনকি কী পোষাক পরে প্রচার করবেন, এই সময়ে কী খাবেন তার জন্যও তাঁরা ভরসা করছেন পুরোহিত এবং জ্যোতিষদের ওপর। মনোবিজ্ঞানীদের মতে নিজেদের ওপর আস্থা না থাকার কারণেই এই ধরণের মানসিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়তেই শুরু হয়েছে জ্যোতিষী ও পুরোহিতদের আচ্ছে দিন। বিধানসভা নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সাথে সাথে উত্তরপ্রদেশে জ্যোতিষী এবং পণ্ডিতদের ব্যবসা ক্রমশ বেড়েছে। রাজনৈতিক নেতা এবং প্রার্থীরা পার্টি লাইন দূরে সরিয়ে রেখে মনোনয়ন জমা দেওয়ার এবং প্রচার শুরু করার জন্য একটি অনুকূল সময়ের জন্য জ্যোতিষীদের সাথে পরামর্শ করছেন।
পণ্ডিত অরুণ ত্রিপাঠী, এক সুপরিচিত জ্যোতিষী এবং সংখ্যাতত্ত্ববিদ, বলেছেন: "প্রার্থীরা এখন সাফল্য পেতে তাদের পোশাকের শুভ রঙ, কোন দিক থেকে তাদের প্রচার শুরু করা উচিত এবং এমনকি নির্বাচনের সময় তাদের কী খাওয়া উচিত তাও জানতে আগ্রহী।" তিনি বলেন, কিছু প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারে তাঁরা কী রঙের গাড়ি ব্যবহার করবেন তাও জানতে চেয়েছেন।
বিপুল সংখ্যক প্রার্থী তাদের রাশিফলের 'রাহু কাল', 'পিত্র দোষ', 'মঙ্গল দোষ' এবং 'কাল সর্প দোষ'-এর অশুভ প্রভাব দূর করতে 'পূজা' শুরু করে দিয়েছেন।
প্রয়াগরাজ জ্যোতিষ সংস্থার এক পুরোহিত জানিয়েছেন: "প্রথম প্রশ্নটি হল মনোনয়নের জন্য শুভ সময়। এমনকি যাদের সাধারণত ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করতে দেখা যায় না, তারাও অনুকূল সময়ের খোঁজে আমাদের সাথে পরামর্শ করছেন। তাঁরা জন্ম সময় অনুসারে অনুকূল সময় জানতে চাইছেন। জন্মপত্রিকার ফলাফল অনুসারে সংশোধনমূলক 'পূজা'র জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতেও তাঁরা ইচ্ছুক।" বেশ কয়েকজন প্রার্থী তাদের স্ত্রীদের রাশিফল সম্পর্কে জানতে জ্যোতিষীদের সাথে পরামর্শ করছেন।
কানপুরের এক জ্যোতিষী আচার্য সন্দীপ বলেন, "একটি ক্ষেত্রে, আমি দেখেছি যে স্ত্রীর রাশিফলে আরও অনুকূল গ্রহের অবস্থান থাকায় প্রার্থী নিশ্চিত করেছেন যে তাঁর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রচার করবেন”।
তিনি বলেন, যখন তিনি তার এক মক্কেলকে বলেছিলেন যে সবুজ রঙ তার ভাগ্য ফেরাবে তারপর থেকে ওই নেতা সবুজ কুর্তা পরতে শুরু করেছেন। যদিও তাঁর দলীয় রঙ সবুজ নয়।
জ্যোতিষী অন্য এক মক্কেলকে মাছ খাওয়া ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। জ্যোতিষীর দাবি রাহু তাঁর রাশিতে বিপজ্জনকভাবে অবস্থান করছে। এখন তিনি পুরোপুরি নিরামিষাশী হয়ে গেছেন।
বারাণসী, প্রয়াগরাজ এবং লখনউ-এর পুরোহিতরাও সোমবার 'রুদ্রাভিষেক', মঙ্গলবার 'সুন্দরকাণ্ড পথ' এবং শনিবারে শনি পূজা সহ বিস্তৃত পূজার অনুরোধে সামাল দিচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পূজা ৫ ফেব্রুয়ারির জন্য নির্ধারিত হয়েছে। জ্যোতিষ মতে 'বসন্ত পঞ্চমী' দিনটিকে শুভ বলে মনে করা হয়।
নির্বাচনী মরশুমে চাহিদা বেড়েছে বিভিন্ন রকম রত্ন ও পাথরেরও। পরিমল রাস্তোগি, লখনউয়ের একজন সুপরিচিত জুয়েলার জানিয়েছেন, ভোটপ্রত্যাশীরা জ্যোতিষীদের সাথে পরামর্শ করার পরে অনুকূল রত্ন কিনে আংটি করছেন এবং ব্রেসলেটের অর্ডার দিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, "গ্রাহকরা তাঁদের আংটি এবং ব্রেসলেট তৈরি করতে আমাদের মাত্র এক বা দুই দিন সময় দিচ্ছেন এবং এমনকি জরুরী ডেলিভারির জন্য বেশি দামেরও প্রস্তাবও দিচ্ছেন।” তাঁর মতে, আগের নির্বাচনগুলির তুলনায় এই নির্বাচনে এই দাপট অনেক বেশি।"
এক প্রার্থীকে জ্যোতিষী বলেছেন হলুদ রং তাঁর ভাগ্য ফেরাবে। এরপর থেকেই তিনি স্থানীয় ফুল বিক্রেতাকে ভোটের আগ পর্যন্ত প্রতিদিন তাঁকে ১০টি হলুদ গোলাপের তোড়া সরবরাহ করতে বলেছেন। এই তোড়াগুলো কৌশলগতভাবে তাঁর বাড়িতে রাখা হয়েছে।
- with inputs from IANS
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন