সঠিক সত্যি এখনও কেউ না জানলেও 'পি' অক্ষর নিয়ে বিভ্রান্তির ফলে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং সমাজবাদী পার্টির (এসপি) মধ্যে এক নতুন দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে।
শীর্ষস্থানীয় সূত্র অনুসারে, দুই জৈন - পীযূষ এবং পুষ্পরাজ – যারা এই রাজনৈতিক ঝড়ের কেন্দ্রে। দুই ব্যক্তির একই পদবী, পেশা এবং এমনকি বসবাসের স্থানীয় এলাকাও এক। কারণ তাঁরা দু’জনেই কনৌজে থাকেন।
পরপর দুই তল্লাশি অভিযান নিয়ে বিভ্রান্তি এখনও কাটেনি। একদিকে পীযূষ জৈন অন্যদিকে পুষ্পরাজ জৈন। গত সপ্তাহে পীযূষ জৈনের বাড়িতে জিএসটি আধিকারিকদের হানা এবং দেশের ইতিহাসে সবথেকে বড়ো সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা ঘটেছে। যেখানে নগদ টাকা, সোনা, রূপো এবং চন্দন কাঠের বস্তা উদ্ধার করা হয়েছে।
এই ঘটনার পরেই সমাজবাদী পার্টির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিজেপি এবং দাবি করে পীযূষ জৈন সেই সুগন্ধি ব্যবসায়ী, যিনি নভেম্বরে 'সমাজবাদী আতর' চালু করেছিলেন। সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগেরও দাবি করা হয় বিজেপির বিভিন্ন মহল থেকে।
পীযূষ জৈনের বাড়ি থেকে নগদ টাকা উদ্ধার হবার সাথে সাথে, বিজেপি তৎপরতার সাথে সমাজবাদী পার্টির ভূমিকা এবং বাজেয়াপ্ত অর্থের অংশ নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
এই ঘটনার পর অখিলেশ দু’দিন অপেক্ষা করেন এবং উদ্ধারকৃত নগদ টাকার স্তূপের ছবি ভাইরাল হওয়ার পরে, তিনি স্পষ্ট করেন যে, এই 'পি জৈন' তার দলের কেউ নয়। এঁর নাম পীযূষ এবং তাঁর দলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির নাম পুষ্পরাজ। যিনি পম্পি নামেও পরিচিত।
যদিও ততক্ষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পীযূষ জৈনের কালো টাকার সাথে 'আতরের খারাপ গন্ধ' যুক্ত করে বক্তব্য রাখেন। অন্যদিকে অখিলেশ এই ঘটনাকে নোট বাতিলের ব্যর্থতার সাথে যুক্ত করে প্রচার করতে শুরু করেন এবং দাবি করেন, পীযূষ জৈন আসলে একজন বিজেপি সমর্থক। এর পরেই শুক্রবার পুষ্পরাজ জৈনের বাড়ি এবং অফিসে অভিযান চালায় আয়কর দপ্তর।
যে ঘটনা প্রসঙ্গে অখিলেশ বলেন, বিজেপি তাঁকে নিশানা করতে চেয়ে ভুল করে নিজের সমর্থকের বাড়ি এবং অফিসে অভিযান করেছে।
শুক্রবার পুষ্পরাজ জৈনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলে, এসপি সভাপতি বলেন, এই ঘটনা কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির একটি 'নির্বাচনী দায়িত্ব'। উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি মুম্বাই, দিল্লি ও গুজরাটেও অভিযান চালানো হয়।
আয়কর দপ্তর এই বিষয়ে এখনও কোনো বিস্তারিত তথ্য দেয়নি। তবে সূত্র অনুসারে তদন্তকারীরা পারফিউম ব্যবসায়ী সংস্থা এবং অন্যদের দ্বারা জাল ইনপুট ট্যাক্স সংক্রান্ত সম্ভাব্য আয়কর ফাঁকির বিষয়ে পণ্য ও পরিষেবা কর বিভাগের কাছ থেকে বিশদ তথ্য জোগাড়ের পরেই অভিযান শুরু করেছিলো।
অখিলেশ অবশ্য অভিযোগ করেছেন, "যখন থেকে বিজেপি নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা করছে, তখনই দিল্লি থেকে নেতারা আসতে শুরু করে এবং তাদের সহযোগীদের - এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) এবং ইনকাম ট্যাক্স (আইটি) আসতে শুরু করে। আমরা নির্বাচনে ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোট করেছি এবং তারা (বিজেপি) সিবিআই, ইডি এবং আইটি-এর মতো তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে জোট করেছে।"
ঘটনাচক্রে, শুক্রবার যখন পম্পি জৈনের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালানো হয় তখন কনৌজেই সাংবাদিক সম্মেলন করছিলেন অখিলেশ যাদব।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অখিলেশ যাদবের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "যে ব্যক্তিকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে তিনি অবশ্যই তাঁর সঙ্গী বা বন্ধু। তাই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন।"
সমাজবাদী পার্টির প্রধানকে পাল্টা জবাব দিয়ে সীতারামন বলেছেন, পীযূষ জৈনের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নগদ "বিজেপির টাকা" নয় এবং এই অভিযান সঠিক ঠিকানাতেই করা হয়েছে। ভুল করে এই অভিযান করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, এই তল্লাশি অভিযান যে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে করা হয়েছিলো এই অভিযান থেকে উদ্ধারীকৃত সামগ্রীতেই তা প্রমাণিত হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন