উত্তরপ্রদেশে ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচন শুধুমাত্র সরকার গঠনের জন্য নয়, বরং একাধিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য তা এর চেয়েও বেশি কিছু। নির্বাচনের ফলাফলের ওপর যাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এবং তাদের জন্য এবারের নির্বাচন ‘ডু-অর-ডাই’ লড়াই। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই নেতাদের বেশিরভাগই নতুন প্রজন্মের এবং এই প্রথম তাঁরা যে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্বে রয়েছেন।
এই নির্বাচনে যে সমস্ত রাজনৈতিক নেতা তাঁদের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন তার মধ্যে সামনের সারিতে আছেন সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব।
ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে, অখিলেশ এককভাবে প্রচারে নেতৃত্ব দিয়েছেন, জোট তৈরি করেছেন এবং এমনকি প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও এককভাবে করেছেন।
এই নির্বাচনে যে সমস্ত রাজনৈতিক নেতা তাঁদের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন তার মধ্যে সামনের সারিতে আছেন সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব।
২০১৭ এবং ২০১৯ সালে, মুলায়ম সিং যাদব এবং অধ্যাপক রাম গোপাল যাদবের মতো নেতারা অখিলেশকে সাহায্য করেছিলেন। যদিও ২০১৯ সালে মুলায়ম, বহুজন সমাজ পার্টির সাথে জোটে প্রকাশ্যে তাঁর ভিন্নমত প্রকাশ করেছিলেন। এবার, মুলায়ম সিং যাদব নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যকলাপ থেকে দূরে রয়েছেন, যদিও মাঝে মাঝে তিনি পার্টি অফিসে আসছেন।
২০২২ সালের নির্বাচনে এসপির পারফরম্যান্সের কৃতিত্ব - বা দোষ – সবকিছুই অখিলেশ যাদবের কাঁধে বর্তাবে৷ এই নির্বাচনের ফলাফল তার রাজনৈতিক জীবনকে তৈরি করতে পারে বা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দলের বেশিরভাগ সিনিয়র নেতারা এমনটাই দাবি করছেন।
যেহেতু এটি প্রিয়াঙ্কার প্রথম স্বাধীন রাজনৈতিক সফর, এই নির্বাচনের ফলাফল কংগ্রেসে তাঁর ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে।
এই তালিকারই আরেক নেতা হলেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। যিনি কংগ্রেসের রাজ্য ইউনিটের সম্পূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। প্রিয়াঙ্কা নির্বাচনের কৌশল, প্রার্থী বাছাই এবং প্রচারের রূপরেখা চূড়ান্ত করছেন। যদিও তিনি নির্বাচনী কৌশলের দিকে মনোনিবেশ করেছেন, কিন্তু দলের রাজ্য ইউনিটের ভাঙন আটকাতে ব্যর্থ হয়েছেন। যা কংগ্রেস নেতাদের অভূতপূর্ব দলত্যাগের সাক্ষী।
মহিলাদের জন্য তাঁর প্রচার এবং পার্টি টিকিটে তাঁদের জন্য ৪০ শতাংশ সংরক্ষণ রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন তৈরি করতে পারে কিনা তা দেখার। প্রিয়াঙ্কার এই পদক্ষেপ আদৌ কংগ্রেসের জন্য লাভবান হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে একের পর এক কংগ্রেস নেতার দলত্যাগ কর্মীদের বরং হতাশ করেছে।
যেহেতু এটি প্রিয়াঙ্কার প্রথম স্বাধীন রাজনৈতিক সফর, এই নির্বাচনের ফলাফল কংগ্রেসে তাঁর ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে। যে বিষয়টি তার কাজকে আরও সমস্যায় ফেলেছে তা হল, এই সময়ে স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে প্রিয়াঙ্কার মা এবং কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর প্রচারে অনুপস্থিতি এবং তাঁর ভাই রাহুল গান্ধীও অব্যক্ত কারণে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন।
কংগ্রেস যদি এই নির্বাচনে কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করতে ব্যর্থ হয় তবে ২০১৯ সালের পর এটি প্রিয়াঙ্কার দ্বিতীয় ব্যর্থতা হবে। এর আগে তিনি ইউপির দায়িত্ব গ্রহণ করার পরেই রাহুল গান্ধী তাঁর আমেঠি আসনটি হারিয়েছিলেন। এবারে তাঁর ব্যর্থতা জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর উন্নীত হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
এই দুই নেতা নেত্রী ছাড়াও রাষ্ট্রীয় লোকদলের (আরএলডি) সভাপতি জয়ন্ত চৌধুরীও উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে মেক-অর-ব্রেক লড়াইয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন।
এই দুই নেতা নেত্রী ছাড়াও রাষ্ট্রীয় লোকদলের (আরএলডি) সভাপতি জয়ন্ত চৌধুরীও উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে মেক-অর-ব্রেক লড়াইয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন। বাবা চৌধুরী অজিত সিংয়ের মৃত্যুর পর এই প্রথম তিনি স্বাধীনভাবে দলকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বছরব্যাপী কৃষকদের আন্দোলনের একমাত্র রাজনৈতিক সুবিধাভোগী হওয়ার সুবিধা জয়ন্ত চৌধুরীর রয়েছে এবং নির্বাচনের দৃশ্যপটে তাঁর রাজনৈতিক পরিচালনা তার দলকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে, যা দীর্ঘ সময় ধরে স্থবির হয়ে পড়েছিল। এই নির্বাচনে আরএলডি প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করলে জয়ন্ত নিজেকে জাটদের অবিসংবাদিত রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবেন।
এই নির্বাচন বহুজন সমাজ পার্টির সভাপতি মায়াবতীর জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এবারেই বিএসপি তার সর্বনিম্ন স্তরে আছে এবং প্রচারে মায়াবতীর অব্যক্ত অনুপস্থিতি ক্যাডারদের হতাশাগ্রস্ত করেছে।
যদি বিএসপি এবারের নির্বাচনে ভালো সংখ্যক আসন পেতে ব্যর্থ হয় তবে তা উত্তরপ্রদেশে দলকে আরও জনবিচ্ছিন্ন করতে পারে এবং মায়াবতীকে একটি অস্বস্তিকর অবস্থানে ফেলতে পারে।
- with IANS inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন