উত্তরপ্রদেশ সরকারের নতুন সোশ্যাল মিডিয়া নীতিকে ‘দানবীয়’ আখ্যা দিল প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া সহ আরও তিনটি সংগঠন। শুক্রবার প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে এই চার সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি ঘোষিত উত্তরপ্রদেশ সরকারের সোশ্যাল মিডিয়া নীতি ‘দানবীয়’। যৌথ এই বিবৃতিতে প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া ছাড়াও সই করেছে প্রেস অ্যাসোসিয়েশন, ইন্ডিয়ান ওম্যানস প্রেস কর্পস এবং ডিজিপাব নিউজ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন।
এদিনের যৌথ বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশ সরকার অবিলম্বে নতুন সোশ্যাল মিডিয়া নীতির ধারা ৭(২), ২০২৪ অবিলম্বে প্রত্যাহার করুক। উল্লেখ্য, নতুন সোশ্যাল মিডিয়া নীতির ৭(২) ধারা অনুসারে উত্তরপ্রদেশ সরকারের তথ্য দপ্তরের ডিরেক্টর যদি মনে হয় কোনও বিষয়বস্তু ‘দেশবিরোধী’ ‘সরকারকে কলুষিত করার জন্য’ করা হয়েছে অথবা ‘অসদ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে’ সেক্ষেত্রে যে কোনও কনটেন্ট ক্রিয়েটরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে।
ওই বিবৃতি অনুসারে, এর ফলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। কারণ এই ধারায় সরকার যদি কোনও বিষয়বস্তুর সঙ্গে সহমত না হয় সেক্ষেত্রে যে কোনও বিষয়বস্তু দেশদ্রোহী বলে চিহ্নিত করতে পারে।
এছাড়াও ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্য আর্থিক প্যাকেজেরও কড়া সমালোচনা করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। বিবৃতি অনুসারে, এর মাধ্যমে সরকারের ভুয়ো প্রচারকদের জন্য পুরষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে অথচ প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকদের করা সরকারের বৈধ সমালোচনাকে শাস্তির আওতায় রাখা হয়েছে।
ওই বিবৃতি আরও জানিয়েছে, এর ফলে ভারতীয় সংবিধানের ১৯(১)(এ) ধারা অনুসারে বাক স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে লঙ্ঘিত হতে পারে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সরকার এভাবে সংবিধানে প্রদত্ত সংবাদমাধ্যমের অধিকারকে কোনও ভাবেই লঙ্ঘন করতে পারেনা।
ওই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মুক্ত এবং স্বাধীন সংবাদমাধ্যম দেশের নাগরিককে তথ্য প্রদান করে এবং তাঁদের শিক্ষিত করে। সেই কারণে তাঁদের গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়।
গত মঙ্গলবারই রাজ্যের সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত নীতিতে বড়োসড়ো পরিবর্তন এনেছে যোগী আদিত্যনাথ শাসিত উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার। রাজ্যের তথ্য মন্ত্রক তৈরি করেছে উত্তরপ্রদেশ ডিজিটাল মিডিয়া পলিসি ২০২৪।
উত্তরপ্রদেশ সরকারের নতুন এই নীতি ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, এক্স এবং ইউটিউবে কার্যকরী হবে বলে জানানো হয়েছে। নতুন নীতি অনুসারে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেশবিরোধী কোনও পোষ্ট করা হলে তার বিরুদ্ধে কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যার মধ্যে আর্থিক জরিমানা, কারাবাস সহ একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানানো হয়েছে। এর আগে ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইটি) অ্যাক্ট-এর ৬৬ই এবং ৬৬এফ ধারা অনুসারে এইসব অভিযোগের বিচার হত।
উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিবৃতি অনুসারে, কোনও আপত্তিকর এবং অবমাননাকর বিষয় সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা হলে অথবা ডিজিটাল মিডিয়ার অপব্যবহার করা হলে সেই ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মানহানির অভিযোগ আনা হতে পারে। এই ধরণের পোস্টের জন্য তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড পর্যন্ত হতে পারে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একটি ডিজিটাল এজেন্সি 'ভি-ফর্ম' তালিকাভুক্ত করা হয়েছে যা বিজ্ঞাপন পরিচালনা করবে। এছাড়াও ভিডিও, টুইট, পোস্ট এবং রিল প্রদর্শনের জন্যও এই এজেন্সি দায়ী থাকবে।
এর পাশাপাশি, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েনসারদের জন্য, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অপারেটারদের কী পরিমাণ টাকা দেওয়া হবে তাও নির্দিষ্ট করে জানানো হয়েছে। এক্স হ্যান্ডেল, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম-এর জন্য মাসিক সর্বাধিক ৫ লাখ, ৪ লাখ এবং ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। ইউটিউবের ক্ষেত্রে ভিডিও, শর্ট, পডকাস্ট এবং অন্যান্য ধরণের বিষয়বস্তুর জন্য দেওয়া যাবে সর্বাধিক ৮ লাখ, ৭ লাখ, ৬ লাখ এবং ৪ লাখ টাকা।
এই প্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী অনিল রাজভর সংবাদসংস্থা আইএএনএস-কে জানিয়েছেন, মন্ত্রীসভা এই বিষয়ে অনুমতি দিয়েছে এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে দেশ বিরোধী কাজে ব্যবহার করা হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন