সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্য ডিএ দেওয়ার মতো অর্থ রাজ্যের কোষাগারে না থাকলেও, গত বছরের তুলনায় এই বছর রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়কদের বেতন ও অন্যান্য খরচ বাবদ সরকারের ব্যয় বেড়েছে ২০ কোটি টাকা।
এই মুহূর্তে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ -র ব্যবধান ৩২ শতাংশ। ৫০ দিনের বেশি সময় ধরে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবিতে শহীদ মিনারে ধর্না দিচ্ছেন সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। অনশনও করছেন তাঁরা। ১০ মার্চ ধর্মঘট এবং তার আগে টানা দু'দিন কর্মবিরতি পালন করেছেন সরকারি কর্মচারীরা। তাঁদের এই আন্দোলনকে নাটক বলে কটাক্ষ করেছেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি আরও বলেন, যাঁরা কিছু পাচ্ছেন তাঁদের আরও দেওয়ার পরিবর্তে যাঁরা বঞ্চিত তাঁদের দেওয়াটা জরুরি মনে করে সরকার। এই বেতনে না পোষালে চাকরি ছেড়েও দিতে বলেন তিনি।
হাকিমের এই মন্তব্যের পরেই প্রশ্ন উঠছে যে, রাজ্য সরকার যখন যথেষ্ট বেতনপ্রাপ্তদের আরও বেশি অর্থ প্রদানে বিশ্বাস করে না, তখন গত ১২ বছরে মন্ত্রী এবং বিধায়কদের বিশাল বেতন বাড়ানোর যৌক্তিকতা কী ছিল?
রাজ্যের অর্থ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবর্ষে (২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত), যা প্রায় শেষ হতে চলল, সেখানে মন্ত্রী ও বিধায়কদের বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য খরচ বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫২ কোটি টাকা। যা ২০২১-২২ সালের তুলনায় ২০ কোটি টাকা বেশি। ২০২১-২২ সালে মন্ত্রী ও বিধায়কদের বেতন, ভাতা বাবদ সরকারের খরচ হয়েছিল ৩৩ কোটি টাকা।
২০১১ সাল, অর্থাৎ রাজ্যে ক্ষমতা বদলের আগে পর্যন্ত একজন বিধায়কের দৈনিক ভাতা ৭৫০ টাকা নির্ধারিত ছিল। বিধায়ক মন্ত্রিসভার সদস্য হলেও এই ভাতাই পেতেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে একজন বিধায়কের দৈনিক ভাতা ২০০০ টাকা এবং মন্ত্রীদের দৈনিক ভাতা ৩০০০ টাকা। অর্থাৎ ১২ বছরে বিধায়কদের ভাতা বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ এবং মন্ত্রীদের ভাতা বেড়েছে ৪ গুণ।
২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী পদের মাসিক বেতন ছিল মাত্র ৮,৫০০ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১৭,০০০ টাকায়। অর্থাৎ প্রায় ১৪ গুণ মাইনে বেড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। এবং মাসিক বিভিন্ন ভাতা মিলিয়ে সেই অঙ্ক গিয়ে দাঁড়ায় ১,৮১,০০০ টাকায়। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটে তাঁর নিজের বাসভবনে থাকেন। কোনও সরকারি আবাসন গ্রহণ করেননি। তাঁর পূর্বসূরি এবং বামফ্রন্ট শাসনের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও দক্ষিণ কলকাতার পাম অ্যাভিনিউতে একটি দুই কক্ষের অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন। তিনি এখনও তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্যের সাথে সেখানে থাকেন।
অর্থ বিভাগের রেকর্ড অনুসারে, ২০১১ সাল পর্যন্ত মন্ত্রীদের মাসিক বেতন ছিল ৭,৫০০ টাকা, যা এখন প্রায় ২৩,০০০ টাকা। তবে বেতন, মন্ত্রী হিসেবে ভাতা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে বর্তমানে একজন মন্ত্রী মাসে পান ১,২২,০০০ টাকা। একজন সাধারণ বিধায়ক বর্তমানে মাসে পান প্রায় ৮২,০০০ টাকা। এর মধ্যে তাঁর মাসিক বেতন ২১,৮০০ টাকা।
ডিএ মামলা বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। কলকাতা হাইকোর্ট সরকারি কর্মীদের সমস্ত বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেও, উচ্চ আদালতের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের যুক্তি, সমস্ত বকেয়া মেটানোর মতো অর্থ রাজ্যের কোষাগারে নেই।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সব্যসাচী বন্দোপাধ্যায়ের মতে, এটি শুধুমাত্র বিশাল মহার্ঘ ভাতার ব্যবধানই নয় যা মন্ত্রী এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বেতন-ভাতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তিনি বলেন, "আমার মতে এই ইস্যুতে আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের একটি অংশের কিছু অসংবেদনশীল মন্তব্য বর্তমানে এই প্রশ্নটিকে উস্কে দিয়েছে। আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য এবং বিবৃতি সত্যিই অযৌক্তিক ছিল।"
-With IANS Inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন