করোনা মহামারী গোটা বিশ্বে আয়ের ভয়াবহ বৈষম্যকে আরো স্পষ্ট করে তুলেছে। এর ফলস্বরূপ পৃথিবীর গুটিকয়েক ধনীতম ব্যক্তি ও শতশত মিলিয়ন দরিদ্র মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আরেকটু ভালো জীবন যাপনের ইচ্ছের মধ্যে বিস্তর ফারাক দেখা গিয়েছে। সোমবার সুইজারল্যান্ডের দাভোস শীর্ষ সম্মেলনে নন-প্রফিট সংস্থা অক্সফাম একটি রিপোর্ট পেশ করে একথা জানিয়েছে।
The Inequality Virus - শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে "ত্রুটিযুক্ত এবং শোষণমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা... বৈষম্য ও নিপীড়ন, পিতৃতন্ত্র এবং কাঠামোগত বর্ণবাদ, সাদা আধিপত্যবাদে বদ্ধমূল ধারণা" - এগুলোর তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে এবং "অন্যায় ও দারিদ্র্যের মূল কারণ" হিসেবে এগুলোকেই চিহ্নিত করা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, "২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ বিস্ময়করভাবে ৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে।... বিশ্বের সবথেকে ধনী দশ ধনকুবেররা এই সময়ের মধ্যে তাঁদের সম্পদের পরিমাণ ৫৪০ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়েছে। এই একই সময়ের মধ্যে বিশ্ব সাক্ষী থেকেছে কীভাবে মহামারীর কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকরি হারিয়ে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধার সম্মুখীন হয়েছে।... অনুমান করা হচ্ছে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী মোট মানুষের সংখ্যা ২০০ মিলিয়ন থেকে ৫০০ মিলিয়ন পর্যন্ত বাড়তে পারে।"
অক্সফাম জানিয়েছে, "মহামারী আমাদের কাছে এই সত্যটি উন্মোচিত করেছে যে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ যারা প্রতিদিন ২ থেকে ১০ ডলারের মধ্যে নিজেদের জীবনযাপন করেন, তাঁরা আর্থিক দৈন্য থেকে মাত্র এক কদম দূরে ছিল। অপরদিকে বাণিজ্যিক ভ্রমণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিলিয়নেরা এই সময় ব্যক্তিগত জেট কিনেছিলেন।"
রিপোর্ট অনুযায়ী, মহামারী সঙ্কট শুরুর পর থেকে পৃথিবীর সবথেকে ধনী ১০ ধনকুবেরদের যে পরিমাণ সম্পদ বেড়েছে, ভাইরাসের কারণে পৃথিবীর সমস্ত ব্যক্তিকে দারিদ্র্যের কবলে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করার এবং প্রত্যেকের জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কেনার জন্য তা যথেষ্ট। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই মহামারীর কারণে মহিলা, অন্য বর্ণ এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোভিড-পরবর্তী বিশ্বে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য কমানোর জন্য কৌশলগত নীতি পরিবর্তনের ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে রিপোর্টে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন