পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নগদ ঋণ নেওয়ার প্রবণতা এবং তা ব্যবহারের প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে গুরুতর উদ্বেগ জানানো হয়েছে। ৩১ মার্চ, ২০১১ পর্যন্ত, পূর্ববর্তী বামফ্রন্ট সরকারের অধীনে শেষ আর্থিক বছরে, পশ্চিমবঙ্গের পুঞ্জীভূত ঋণ ছিল ১.৯৭ লক্ষ কোটি টাকার কিছু বেশি।
শেষ রাজ্য বাজেটের সংশোধিত অনুমান অনুসারে, রাজ্য সরকারের মোট পুঞ্জীভূত ঋণ ৩১শে মার্চ, ২০২৩ পর্যন্ত ৫.৮৬ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে যাওয়ার অনুমান করা হয়েছে, যা ৩১শে মার্চ, ২০২২-এ ৫.২৮ লক্ষ কোটি টাকা ছিলো৷ এর অর্থ, তৃণমূল সরকারের আমলে রাজ্যের পুঞ্জীভূত ঋণ প্রায় ১৮২ শতাংশ বেড়েছে।
প্রথম উদ্বেগের বিষয় হল রাজ্যে গ্রস স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্টের (জিএসডিপি) অনুপাতে বিশাল ঋণ। রাজ্যের অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যান এবং সর্বশেষ CAG রিপোর্ট অনুসারে, ২০২০-২১ আর্থিক বছরের জন্য পশ্চিমবঙ্গের ঋণের GSDP অনুপাত ৩৭.০৫ শতাংশে পৌঁছেছে। যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক স্তরে আছে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। ২০১৮-১৯ সালে এই অনুপাত ছিলো ৩৫.৬৮ শতাংশ।
অর্থনীতির অধ্যাপক পি কে মুখোপাধ্যায়ের মতে, যদি গত ১০ বছরে রাজ্য সরকারের বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা এবং বর্তমান আর্থিক বছরের জন্য তার আনুমানিক ঋণ প্রবণতার দিকে লক্ষ্য রাখা যায়, তাহলে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে ঋণের সাথে জিএসডিপি-র অনুপাত আগামী আর্থিক বছরে আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, "অর্থশাস্ত্রের একজন শিক্ষক হিসাবে, আমি উদ্বিগ্ন যে পশ্চিমবঙ্গ ৫০ শতাংশের GSDP অনুপাতের ঋণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যদি রেকারিং খরচ এবং অপরিকল্পিত খরচের ক্ষেত্রে কিছু কঠোর আর্থিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, এক্ষেত্রে যে পরিস্থিতি তৈরি হবে তা সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। আমাদের অবশ্যই রাষ্ট্রীয় আবগারি ছাড়াও রাজস্ব উৎপাদনের বিকল্প উপায় খুঁজে বের করতে হবে।"
এছাড়াও আরও একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা হল পুরানো ঋণ মেটানোর জন্য নতুন ঋণের ব্যয়ের শতাংশ।
গত পাঁচটি আর্থিক বছরের জন্য রাজ্যের বাজেটের কাগজপত্রের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতি আর্থিক বছরে বাজারের নতুন ঋণের প্রায় ৭২ শতাংশ পুরানো ঋণ পরিশোধের পিছনে ব্যয় করা হয়েছে।
অর্থনীতির অধ্যাপক শান্তনু বসুর মতে, এর অর্থ হল রাজ্য সরকারের মূলধন ব্যয়ের পিছনে ব্যয় করার মতো সামান্য পরিমাণ অর্থই অবশিষ্ট রয়েছে। বসু বলেন, "মূলধন ব্যয়ের কারণে কম খরচের অর্থ কম সম্পদ সৃষ্টি, যার অর্থ কম কর্মসংস্থান সৃষ্টি।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন