করোনা আবহে দীর্ঘদিন স্কুল কলেজ বন্ধ থাকার পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছিলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ছাত্র ছাত্রীরাও আবার স্কুল শুরু হওয়ায় নতুন করে অভ্যস্ত হচ্ছিলো স্কুল জীবনের সঙ্গে। ঠিক এই সময়েই রাজ্য সরকারের অকাল গরমের ছুটির নোটিশ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সাধারণ মানুষের মধ্যে। কেউ কেউ যেমন মনে করছেন প্রচন্ড দাবদাহর কারণে স্কুলে গরমের ছুটি যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত, আবার অনেকেই মনে করছেন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
এদিনই বিকেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন প্রচন্ড দাবদাহের কারণে আগামী ২ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত স্কুল বন্ধ থাকবে। বুধবার রাজ্য শিক্ষা দপ্তর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে রাজ্যে দাবদাহজনিত পরিস্থিতির কারণে গরমের ছুটি ঘোষণা করা হল। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া অবধি আগামী ২ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সমস্ত স্কুল বন্ধ থাকবে। এই নির্দেশের আওতা থেকে বাদ রাখা হয়েছে দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলাকে।
রাজ্য সরকারের এই নির্দেশের পরেই বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন এবং অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বহু অভিভাবক যেমন রাজ্য সরকারের এই নির্দেশিকাকে স্বাগত জানিয়েছেন তেমনই শিক্ষকদের সংগঠন এবিটিএ-র পক্ষ থেকে এই নির্দেশিকার বিরোধিতা করা হয়েছে।
এবিটিএ-র রাজ্য সম্পাদক সুকুমার পাইন এই প্রসঙ্গে পিপলস রিপোর্টারের প্রতিনিধিকে জানান, দাবদাহর কারণে দুপুরের বদলে সকালে স্কুল খোলা রেখে পঠন পাঠন চালানো যেত। এখনই স্কুল বন্ধ করার অর্থ হল আবারও অনলাইন শিক্ষার দিকে ছাত্রছাত্রীদের ঠেলে দেওয়া। সেক্ষেত্রে আবারও ডিজিটাল বৈষম্যের শিকার হতে হবে কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি আবহাওয়ার একটু পরিবর্তন হলেই দ্রুততার সঙ্গে স্কুল খুলতে হবে।
এই বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ফেসবুকের উই দ্য টিচারস নামক পেজে উত্তম কুমার পুরকায়েত লিখেছেন, “সকালে অল্প সময়ের জন্য ক্লাস হলেও এমন কোনও ক্ষতি হতো না।”
সুমন্ত কোনার লিখেছেন, "২ রা মে থেকে যেখানে আবহাওয়া পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা অপ্রাসঙ্গিক" সরকারি শিক্ষাকে শেষ করে দেওয়ার চক্রান্ত। অবিলম্বে অতিরিক্ত ছুটি প্রত্যাহার করুক সরকার। অন্তত সকাল (6:30-10:00) পর্যন্ত স্কুল হোক। ছুটি কখনো সমাধান হতে পারে না। সকল অভিভাবকদের উচিত এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো। এরপর আসবে সেই নির্দেশিকা যা ছুটি শেষ হওয়ার পরও সংশোধন হতে থাকবে। যিনি নির্দেশিকা লিখবেন তিনি লিখবেন "ক্লাস সাসপেন্ড"।”
জিতা ঘোষ-এর “ফার্স্ট সামেটিভ টা অন্তত হয়ে গেলে অনেক সুবিধা হতো”-র উত্তরে সুদীপ্ত মুখার্জি লিখেছেন, “প্রথম সামেটিভ পরীক্ষা নিশ্চয়ই জরুরী, কিন্তু তার অপেক্ষা অধিক জরুরী হল ছাত্রছাত্রীদের জীবন। তাপপ্রবাহ যে হারে বাড়ছে,এটা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত। বরং, ছুটিটা আগামীকাল থেকেই কার্যকর হলে ভালো হতো।”
স্নেহাশিস কোনারের বক্তব্য, “এই প্রবল দাবদাহে ডে- সেশনে! না উচিত ছিল না। বরং মর্নিং সেশন প্রয়োজন ছিল গ্রীষ্মকালীন অবকাশ পর্যন্ত। শুধু সামেটিভ নয়,শ্রেণী শিখনও জরুরী ছিল।হিট ওয়েভের কদিন ছুটি রাখলেই হতো।তবে সরকার বাহাদুর ভালো বুঝবেন। আমাদের মতামত কে বা কবে নেয়!”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন