কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ওঠা ‘ক্যাশ ফর কোয়ারি' স্ক্যাম থেকে তৃণমূল নেতৃত্ব নিজেদের দূরত্ব বজায় রাখছে। এখনও পর্যন্ত ঘটনা পরম্পরায় এটা স্পষ্ট যে আগামী দিনে এই বিতর্ক থেকে নিজেদের সম্পূর্ণভাবে দূরে সরিয়ে নিতে চলেছে।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বিবৃতির পর রাজনৈতিক মহল মনে করছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ থেকে এটা স্পষ্ট যে তৃণমূল এই ইস্যুতে বিতর্কের জন্য কোনও দায় নিতে ইচ্ছুক নয়৷
সম্প্রতি কুণাল ঘোষ এক বিবৃতিতে বলেন, “এই বিষয়ে দলের কোনো মন্তব্য নেই। দল এই ইস্যুতে কোনও প্রতিক্রিয়া দেবে না।” যদিও বিতর্কের শুরু থেকে, এটা স্পষ্ট যে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব এই বিষয়ে সতর্কতার সাথেই চলতে চাইছে। কুণাল ঘোষের বিবৃতির পর তৃণমূল নেতৃত্ব যে এই বিষয় থেকে নিজেদের সম্পূর্ণভাবে দূরে রাখতে চায় তা আরও স্পষ্ট হয়ে গেছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে এই ইস্যুতে দলের পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য না করে কার্যত মহুয়া মৈত্রকে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে তাঁকে একাই লড়াই করতে হবে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বেশ কিছু কারণে মহুয়া মৈত্র তাঁর দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র এখনও পর্যন্ত দাবি করেছেন যে তিনি সংসদের এথিক্স কমিটি বা কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর দিক থেকে আসা যে কোনো ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মহুয়া মৈত্র ইস্যুতে তৃণমূলের দূরত্ব বজায় রাখার প্রথম কারণ, বর্তমানে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই স্কুলের চাকরি, পৌরসভার চাকরি, কয়লা ও গবাদি পশু পাচারের মতো অনেক কথিত কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত। ফলত দলেরই এক সাংসদের 'ক্যাশ ফর কোয়েরি স্ক্যাম' ইস্যুর বিতর্ক এই মুহূর্তে নেতৃত্বের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, দ্বিতীয় কারণটি আরও গুরুত্বপূর্ণ এবং তা হল পশ্চিমবঙ্গে আদানি গ্রুপের ভবিষ্যতের বিনিয়োগের সম্ভাবনা। গত বছরের এপ্রিলে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট-২০২২-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময়, রাজ্যকে একটি আদর্শ বিনিয়োগের গন্তব্য হিসাবে দেখানোর জন্য সরকার কর্তৃক আয়োজিত বার্ষিক অনুষ্ঠান, আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান গৌতম আদানি রাজ্যে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আগামী কয়েক বছরে রাজ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা আদানি গোষ্ঠীর।
ওই সামিটে আদানি জানিয়েছিলেন, সমুদ্রের নীচ দিয়ে যাওয়া কেবল, ডেটা সেন্টার এবং ওয়ারহাউস প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগ করা হবে এবং এতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে।
এই প্রসঙ্গে রাজ্যের এক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক জানিয়েছেন, “প্রস্তাবিত বিনিয়োগ বাস্তবে কখন ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু রাজ্য সরকারের জমি এবং এসইজেড নীতির কারণে পশ্চিমবঙ্গ একটি পছন্দের বিনিয়োগের গন্তব্য নয় বলে বিবেচনা করে, শাসক দল প্রতিশ্রুত বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে সত্যিই ঝুঁকিতে ফেলতে পারে না। তাই এই দৃষ্টিকোণ থেকে, তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব এক দলীয় সাংসদকে জড়িয়ে 'ক্যাশ ফর কোয়েরি স্ক্যাম' ইস্যু থেকে নিজেদের দূরে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেছে।”
এছাড়াও নদিয়া জেলায় তৃণমূলে ঘরোয়া কোন্দল এই মুহূর্তে মাত্রাছাড়া। দলের সঙ্গে যুক্ত জেলা স্তরের বেশ কিছু নেতা জানিয়েছেন সাংসদ মহুয়া মৈত্র তাঁর নির্বাচনী এলাকায় বেশি সময় দেন না। যা নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগ গুরুতর আকার নেবার পর তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের মধ্যে ইতিমধ্যেই মহুয়া মৈত্রর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছিল। বর্তমান ঘটনা তাতেই আরও ইন্ধন জুগিয়েছে।
(Except for the headline, this story has not been edited by People's Reporter and is translated and published from a syndicated feed.)
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন