World Environment Day: কেবল উদযাপন নয়, সংগঠিত আন্দোলনই লক্ষ্য

কিছু প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হলে হয়তো কিছুটা সমাধান হতে পারতো ঠিকই কিন্তু যতদিন না বিকল্প কিছু পাওয়া যায় অর্থাৎ সরকার বিকল্পের ব্যবস্থা না করে কোন আইন করে প্লাস্টিক দূষণ রোধ করা যাবেনা।
ছবি প্রতীকী
ছবি প্রতীকীছবি সৌজন্য - আইআইএসডি
Published on

বিশ্ব পরিবেশ দিবস কেবল ৫ই জুনের মধ্যে আবদ্ধ থাকলে সর্বগ্রাসী প্লাস্টিক দূষণ আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকারাছন্ন করে দেবে। দৃশ্যমান প্লাস্টিক দূষণ থেকে এখন আরও মারাত্মক হয়ে উঠছে মাইক্রো এবং নানো প্লাস্টিকের অদৃশ্য আক্রমণ। ২০১৮ সালের বিশ্বপরিবেশ দিবসের আহ্বানের মত এবারেও ইউএনএফসিসি (United Nations Framework Convention on Climate Change)-র আহ্বান ‘Beat Plastic Pollution’ বা প্লাস্টিক দূষণকে প্রতিহত কর।

২০২২ সালের ১লা জুলাই থেকে কয়েকটি প্লাস্টিক উপকরণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই তালিকার মধ্যে মাত্র ২১টি প্লাস্টিক উপকরণ রয়েছে। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে প্লাস্টিক উপকরণগুলি ব্যবহার করি এই তালিকা সেই তুলনায় হিমশৈলের উপরিভাগ মাত্র। কুয়োর দড়ি, বালতি, জলের বোতল, গুঠখা এবং আলু চিপসের প্যাকেট থেকে মোবাইল সেট ও গাড়ির অভ্যন্তর পর্যন্ত কয়েক শত ধরণের প্লাস্টিকজাত উপকরণ আমারা দৈনদিন জীবনে ব্যবহার করে থাকি। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে রোদে ক্ষয়ে যাওয়া প্লাস্টিকে গুঁড়ো। এগুলি আমাদের খাদ্য শৃঙ্খলে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে প্রবেশ করছে।

কিছু প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হলে হয়তো কিছুটা সমাধান হতে পারতো ঠিকই কিন্তু যতদিন না বিকল্প কিছু পাওয়া যায় অর্থাৎ সরকার বিকল্পের ব্যবস্থা না করে কোন আইন করে প্লাস্টিক দূষণ রোধ করা যাবেনা। বিকল্প মানে কেবল প্লাস্টিকের বিকল্প নয়, এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের রুটি রুজির বিকল্প।      

গড় তাপমাত্রা ক্রমবর্ধমান    

প্লাস্টিক দানব ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত গবেষণার আন্তর্জাতিক সংস্থা আইপিসিসি (Intergovernmental Panel on Climate Change) প্রথম ভাগের প্রতিবেদনে ছত্রে ছত্রে বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। জলবায়ু পরিবির্তনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিশ্ব ঊষ্ণায়ন। আইপিসিসির প্রথম দল (WGI) জলবায়ু পরিবর্তনের পরিমাপকগুলি (Physical Science Basis) চিহ্নিত করে। দ্বিতীয় দল (WGII) জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অভিযোজ্যতা এবং দুর্বল স্থানগুলিকে চিহ্নিত করার কাজ করছে এবং তৃতীয় দল (WGIII) জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে বিপদ সামনে আসছে তার মোকাবিলার উপায় নির্ধারণের কাজ করছে। চতুর্থ দলটি একটি টাস্ক ফোর্স (The Task Force on National Greenhouse Gas Inventories বা TFI)। এর কাজ হল গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন ও শোষণের তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করা।

সমস্ত তথ্য সম্বলিত তিনটি রিপোর্ট নিয়ে আইপিসিসি একটি সংশ্লেষিত (Synthesis) রিপোর্ট তৈরির কাজ করছে। অন্য দুটি রিপোর্ট এবং সংশ্লেষিত প্রতিবেদন ২০২২ সালের প্রথম দিকে প্রকাশিত হবে। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হল আগে আইপিসিসির প্রকাশিত ৫ টি রিপোর্ট এবং এর মাঝে মাঝে প্রকাশিত বিশেষ রিপোর্ট গুলি নিয়ে UNFCCর  প্রতি বছর একবার করে আন্তর্জাতিক আলোচনা সংগঠিত হলেও কোন সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করা যায়নি। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে জাপানের কিওটো শহরে অনুষ্ঠিত আলোচনায় যে চুক্তিতে ১৯২টি দেশ স্বাক্ষর করে তার প্রয়োগ ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে হওয়ার কথা। এখানে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের কার্বন নির্গমনের উপর ভিন্ন মাত্রার নিয়ন্ত্রনের কথা বলা হয়ে ছিল। আমেরিকা এবং তার তল্পিবাহকরা তার মান্যতা দেয়নি। ফলে কোন অগ্রগতিও ঘটেনি। 

অন্য একটি বিষয় বড় করে সামনে আসছে। তা হল কার্বন অফসেটের মধ্য দিয়ে কার্বন বাণিজ্যের আন্তর্জাতিক বিস্তার। অভিধান অনুযায়ী ‘কার্বন অফসেট’ হল এক ক্ষতিপুরক ব্যবস্থা যার মধ্যদিয়ে বায়ু মণ্ডলে নির্গত কার্বন ডাইওক্সাইডকে বৃক্ষ রোপণের মধ্যদিয়ে শোষণের ব্যবস্থা করা যায়।

ধরা যাক কোন এক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র অধিক কার্বন এবং অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন করতে বাধ্য হয়। তাকে সেই গ্যাসগুলির শোষণের ব্যবস্থা করতে প্রতি টন কার্বন সমতুল্য (carbon dioxide-equivalent বা CO2e) মূল্য দিতে হবে। এই পদ্ধতিকে ‘কার্বন অফসেট’ বলা হয়। সমতুল্য মূল্য অর্থাৎ কার্বন ডাইওক্সাইড বাদেও যে অন্যান্য দূষক গ্রিন হাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে নির্গত হয় তাকে কার্বনের হিসাবে রূপান্তরিত করে বিচার করা হয়। কিন্তু মুনাফা লোভীদের অর্থনীতি কোনও অভিধান মানেনা। তাই এই অফসেটের বিধি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘কার্বন বাণিজ্যে’ পরিণত হয়ে যায়।    

বাৎসরিক উৎসবের মতো প্রায় প্রতি বছর ইউএনএফসিসি কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (CCC) এবং কনভেনশন অন বায়ো ডাইভারসিটি (CBD)-র  কনফারেন্স অফ পার্টিজ (CoP)-এর  আলোচনা সভা পৃথিবীর কোন না কোন শহরে অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ২০০টি দেশের নীতি নির্ধারক, বিজ্ঞানী এবং রাষ্ট্র প্রধানরা উপস্থিত হন এই আলোচনায়। স্টকহোমে ১৯৭২ সাল থেকে শুরু এই আলোচনা এক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় ১৯৯২ সালে রিও-ডি-জেনেইরো তে। তার পর চলছে এই বাৎসরিক নিষ্ফলা আলোচনা।

এই সমস্ত আলোচনার একটাই উদ্দেশ্য হল বায়ু মণ্ডলে কার্বন ডাইওক্সাইডের পরিমাণ এভাবে ধরে রাখা যে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি, অর্থাৎ প্রাক শিল্প বিপ্লবের যুগের তুলনায় পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি থেকে বেশি না হয়। যেভাবে বায়ু মণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিজ্ঞানীরা মনে করেন ২০৩০ সাল নাগাদ এই লক্ষে আমাদের গ্রহ পৌছে যাবে। এই ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের দিকে অনেকটাই ঠেলে দিচ্ছে আমেরিকা। আমেরিকা কোনো আলোচনাকে আইনগত ভাবে বাধ্য (Legally binding) করতে দিচ্ছেনা।   

গত ২২শে মে বিশ্ব জৈববিচিত্র দিবসের আহ্বান ছিল ‘From agreement to action: Build back biodiversity’। অনেক আলোচনা হয়েছে, এবার কাজের পালা। এবার প্রতিবাদের ধ্বনি তোলার পালা। সুইডেনের কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ সারা বিশ্বজুড়ে আওয়াজ তুলছে এই ব্যবস্থার পরিবর্তন চাই। যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কেবল মুনাফার পেছনে ছোটে পরিবেশ তার হাতে সুরক্ষিত নয়। তাই গ্রেটা সহ অন্যান্য অনেকের আহ্বান হল আন্দোলন আরও তীব্র করে এই ব্যবস্থার সমূলে উৎপাটন করাই লক্ষ।

* লেখক বিদ্যাসাগর কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, পরিবেশবিদ এবং বিজ্ঞান আন্দোলনের নেতা        

ছবি প্রতীকী
Plastic Waste: জমছে প্লাস্টিকের পাহাড়, বিপণ্ণতা বাড়ছে জীবজগতের

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in