শরণার্থী উদ্ধার করা থেকে অলিম্পিকের মঞ্চে সিরিয়ার ইউশরা মার্দিনি

যুদ্ধবিধ্বস্থ সিরিয়ার সাঁতারু মার্দিনির জাপান সফর শুধু সাফল্যের গল্পই বলেনা, অনেক আশার গল্পও বলে
ইউশরা মার্দিনি
ইউশরা মার্দিনিছবি- সংগৃহীত
Published on

চলতি বছরে টোকিওয় রিফিউজি অলিম্পিক টিমে ২৯ জন অ্যাথলিট অংশগ্রহণ করেছেন। মোট ১২টি বিভাগে অংশগ্রহণ করেছেন এই ২৯ জন অ্যাথলিট। যাঁদের মধ্যে অন্যতম ইউশরা মার্দিনি। যুদ্ধবিধ্বস্থ সিরিয়ার সাঁতারু মার্দিনির জাপান সফর শুধু সাফল্যের গল্পই বলেনা, অনেক আশার গল্পও বলে।

২০১৫ সালে সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হলে মার্দিনি বুঝতে পারেন, বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া আর কোনও পথ নেই তাঁর সামনে। দামাসকাসের দারায়ার বাড়ি মার্দিনির। বাবা এজজাতও একজন সাঁতারু। সিরিয়ার ন্যাশনাল স্যুইমিং টিমে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। মা একজন সাইকোথেরাপিস্ট। তাঁরা কখনও দেশ ছেড়ে পালানোর কথা ভাবেননি। কিন্তু ইউশরা নিজেকে ঘরবন্দি রাখতে পারেননি। রোজই চলতে থাকা শুটআউটের মধ্যে ইউশরা ও তাঁর বোনের পক্ষে সম্ভব ছিল না স্যুইমিং প্র্যাক্টিসের জন্য পুলে যাওয়া। যেখানে তাঁদের বাবা তাঁদের প্রশিক্ষতারতেন।

বাড়ি ছাড়ার তাগিদ আরও বাড়ে যখন, তাঁদের বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের গৃহবন্দি করে রাখা হয়। যে বাড়িতে সুখে শান্তিতে বসবাস করছিল তাঁরা, সেই বাড়িতে থাকাই অসহ্য হয়ে উঠছিল। এরপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১৭ বছরের ইউশরা ও তার বোন শত ঝুঁকি থাকলেও বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়বে। পুরো পরিবারের এভাবে পালানোর ব্যবস্থা করা অসম্ভব ছিল। কিন্তু তাদের এক আত্মীয় তাদের তুরস্ক পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।

ইউশরার বহু বছরের প্রশিক্ষণ কাজে লাগে যখন লোকভর্তি নৌকো জলে উল্টে যায়। তাঁদের বাবা বিশ্বের সেরা সাঁতারু হিসেবে তাঁদের তৈরি করেছিলেন। কিন্তু বিশ্বের সামনে নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরার আগেই তাদের প্রতিভা নিজেদের পাশাপাশি ১৮ জন শরণার্থীকে বাঁচাতে কাজে লেগে যায়। তুরস্কের উপকূল থেকে রওনা দেওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যেই নৌকোটির ইঞ্জিন ডুবে যায়। উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ে যে যা হাতের কাছে পেয়েছে তাই ধরে ভাসতে থাকে অনেকেই। ইউশরা ও সারা ঠান্ডা জলের মধ্যেই নৌকোটি কোনওমতে সোজা করে। সমুদ্রের মাঝেই ৩ ঘণ্টা বিশ্রাম নেয় তারা। এরপর তারা গ্রীক আইল্যান্ডে এসে পৌঁছয়।

তারপর আরও অনেক যুদ্ধ। ইউশরা স্বপ্ন দেখতেন পাইলট হওয়ার। এখন তিনি রাষ্ট্রসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর কণিষ্ঠতম গুডউইল অ্যাম্বাসাডর। তিনি জানিয়েছেন, এখন তিনি বিশ্বের লাখো মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বিশ্বের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়ায় এখন তাঁর প্রধান লক্ষ্য। বার্তাটি হল, 'শরণার্থীরাও অন্য অনেকের মতই সাধারণ মানুষ।'

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in