বয়স যে কেবল একটি সংখ্যা মাত্র, তার বেশি কিছুই নয়, অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর কঠিন অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে তা প্রমাণ করলেন কালনার ৭৪ বর্ষীয়া অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা অনিমা তালুকদার। সিঙ্গাপুরের অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় ভারতের হয়ে দুটি সোনা এবং একটি ব্রোঞ্জ জিতেছেন তিনি।
বিশ্বমঞ্চে ভারতের তেরাঙা উড়িয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন ভারতে খেলাধূলোতে প্রবীণরাও কতোটা এগিয়ে। আশির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও অনিমার মধ্যে যে তারুণ্যের জোশ, তাকে কুর্নিশ জানাতেই হয়। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মাস্টার্স ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বর্ষীয়ান।
বর্ষীয়ান অ্যাথলিটদের জন্য আয়োজিত এই মাস্টার্সে দেশের প্রায় ৫০০ জন প্রতিনিধির মধ্যে অণিমা ছিলেন অন্যতম। সেখানে ৩ কিলোমিটার ম্যারাথন হাঁটা এবং ২০০ মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছেন বাংলার এই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। এছাড়াও শটপাটে ব্রোঞ্জও জিতেছেন তিনি।
অনিমা ছাড়াও স্কুল শিক্ষক দেবাশিস চক্রবর্তী লং জাম্পে সোনা জিতেছেন। কালনার কৃষ্ণদেবপুরের বাসিন্দা অনিমা তালুকদার। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি ধাত্রীগ্রাম বাঁধাগাছি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার আগেই অনিমার স্বামী প্রয়াত হন। বর্তমানে তিনি গ্রামের বাড়িতে একাই থাকেন। তাঁর তিন সন্তানের সবাই চাকরি এবং বৈবাহিক সূত্রে বাইরে। একা থাকলেও একাকীত্ব কখনোই গ্রাস করেনি আশির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা অনিমাকে। বরং তাঁর বাড়ি সবসময়ই ভরপুর থাকে শিশু-কিশোরদের ভিড়ে। বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খেলাধুলোতে নিজের ধ্যান জ্ঞান সমর্পণ করেছেন তিনি। পড়াশোনার পাঠ দেওয়ার পাশাপাশি এলাকার শিশু কিশোরদের খেলাধুলোতেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কর্মসূত্রেই হাঁটাহাঁটির অভ্যেস তৈরি হয় অনিমার। প্রতিদিন স্কুলে যেতেন দু কিলোমিটার হেঁটে, ফিরতেনও ঠিক একইভাবে। ছোটবেলা থেকেই ছিলো খেলাধুলোর প্রতি ঝোঁক।
তাই ২০০৪ সালে অবসর নেওয়ার পর বয়স্ক মানুষদের জন্য আয়োজিত প্রতিযোগীতা গুলিতে অংশ নিতে থাকেন তিনি। গত ডিসেম্বর মাসেই রাজ্যস্তরের প্রতিযোগীতায় বনগাঁ এবং উত্তরপাড়ার বিভিন্ন ইভেন্টে প্রথম হন। চেন্নাইয়ে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগীতায় ৫ কিলোমিটার ম্যারাথনে রূপো জেতেন। জুন মাসে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মাস্টার্স ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডে তাঁকে অংশগ্রহণের জন্য বলা হলে, রাজি হতে বিন্দুমাত্র সময় নেননি তিনি। বিশ্বের সাতটি দেশের প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলে সোনা জেতেন তিনি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন