রিও ডি জেনেরিওর ফাভেলাস থেকে নাইরোবির বস্তি, মোনাকোর খেলার মাঠ থেকে বেভারলি হিলস। সব জায়গাতেই ফুটবল পায়ে দেখা যাবে শিশুদের। তাঁদের কেউ স্বপ্ন দেখে জিদান হওয়ার, কেউ বা পেলে, কেউ বা হতে চায় ফেরেঙ্ক পুসকাস, কেউ দিয়েগো মারাদোনা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা দশ ফুটবলার কারা! তা নিয়ে তর্ক লেগেই থাকে। যতদিন ফুটবল থাকবে, এই বিতর্কও লেগে থাকবে শেষ পর্যন্ত। ফুটবল বিশ্বে আইকন কম নেই। তবে তাঁদের মধ্যে থেকে বিশ্বকাপের সেরা দশজনকে বেছে নিতে বললে মত পার্থক্য হবেই। কাতার বিশ্বকাপের পর্দা উঠতে আর মাত্র ১৩ দিন। তার আগে দেখে নেওয়া যাক এমন দশ নায়ককে যারা বিশ্বকাপ রঙিন করেছেন নিজেদের আলোতে।
১০. জিনেদিন জিদান - বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে জোড়া গোল করে দেশের মাটিতে জেতেন বিশ্বকাপ। ইনজুরির কারণে ২০০২ বিশ্বকাপ থেকে ২০০৬ বিশ্বকাপে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন এই ফরাসী তারকা। ফাইনালে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেও টুর্নামেন্ট সেরার তকমা পান তিনি। বিশ্বকাপ না এলেও ফ্রান্স দল প্যারিসে পা রাখার সাথে সাথে হাজার হাজার মানুষ জিদানের জন্য গলা ফাটান।
৯. জিমি গ্রীভস - ১৯৬৬ বিশ্বকাপের তারকাখচিত ইংল্যান্ড দলের সদস্য ছিলেন জিমি গ্রীভস। ফাইনালে চোটের কারণে খেলতে না পারলেও তার আগে টুর্নামেন্টে দাপট দেখান তিনি। ইংল্যান্ডের জার্সিতে ছ'টি হ্যাটট্রিক রয়েছে তাঁর। এই রেকর্ড এখনও অক্ষত রয়েছে। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপজয়ী ব্রিটিশ দলের এই সদস্য, ফুটবল ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
৮. ফেরেঙ্ক পুসকাস - ফুটবল বিশ্বে হাঙ্গেরী সোনালী যুগের কান্ডারি ছিলেন ফেরেঙ্ক পুসকাস। হাঙ্গেরীর হয়ে ৮৫ ম্যাচে ৮৪ গোল করেছেন তিনি। পুসকাসের অধীনে হাঙ্গেরী এতোটাই শক্তিশালী ছিল যে ১৯৫৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালই একমাত্র ম্যাচ যেখানে একটা গোটা দশকে মাত্র একবার হারের মুখ দেখেছিলো দেশটি। পুসকাস তাঁর কেরিয়ারে ৭০৫ ম্যাচে গোল করেছেন ৭০২ টি।
৭. লোথার ম্যাথাউস - জার্মানির হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা লোথার ম্যাথাউস। ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপজয়ী সদস্য ম্যাথাউস ১৫০ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল করেছেন ২৩ টি। এই জার্মান মিডফিল্ডার খেলেছেন পাঁচটি বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ(২৫ টি)খেলার রেকর্ডও রয়েছে তাঁর। দিয়েগো মারাদোনা বলেছিলেন, ম্যাথাউসই তাঁর সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ।
৬. মিরোস্লাভ ক্লোজে - বিশ্বকাপ ফুটবলের কিংবদন্তী মিরোস্লাভ ক্লোজে। ফুটবলের পাশাপাশি তাঁর মিষ্টি ব্যবহারে মুগ্ধ থাকতো ফুটবল প্রেমীরা। চারটি বিশ্বকাপে গোল করা ক্লোজে অবশেষে ২০১৪ সালে হাতে শিরোপা তুলে নেন। জার্মানির জার্সি গায়ে ১৩৭ ম্যাচে ৭১ গোল করেছেন তিনি। এছাড়াও বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৬ গোলের মালিক এই জার্মান মহাতারকাই।
৫. রোনাল্ডো - মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৯৯৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের ট্রফি হাতে তুলেছিলেন 'দ্য ফেনোমেনন' রোনাল্ডো। চার বছর পর ব্রাজিলকে ফাইনালে নিয়ে গিয়ে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জেতেন। ২০০২ বিশ্বকাপের ফাইনালে জোড়া গোল করে ফের দেশকে শিরোপা জেতান রোনাল্ডো। ১৫ টি গোল করে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলস্কোরার তিনি। দেশের জার্সিতে ৯৮ ম্যাচে ৬২ টি গোল করেছেন।
৪. ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার - বিশ্বকাপের নায়কদের কোনো সংকলনই ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারকে বাদ দেওয়া যায় না। জার্মানির ১৯৭৪ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ডিফেন্ডার হওয়া সত্ত্বেও দেশের জার্সিতে ১০৩ ম্যাচে ১৪ গোল করেছিলেন বেকেনবাওয়ার। দিদিয়ের দেশঁ এবং মারিয়ো জাগালো ছাড়া তৃতীয় ব্যক্তি বেকেনবাওয়ার যেনে ফুটবলার এবং কোচ দুই ভূমিকাতেই দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন।
৩. জোহান ক্রুইফ - তিন বারের ব্যালন ডি'অর জয়ী ডাচ কিংবদন্তীর ফুটবল দর্শন সাড়া জাগিয়েছিলো ফুটবল বিশ্বে।ক্রুইফ নেদারল্যান্ডের হয়ে ৪৮ ম্যাচে ৩৩টি গোল করেছেন। তাঁর হাত ধরে নেদারল্যান্ডস ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে জোড়া গোলের পাশাপাশি তৎকালীন চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে ছিটকে দিয়েছিলেন তিনি। তবে বেকেনবাওয়ারের দলের কাছে শিরোপা হারাতে হয় তাঁকে।
২. দিয়েগো মারাদোনা - ভক্তদের কাছে এল পিবে দে অরো (সোনালী বালক) ডাকনামে পরিচিত মারাদোনা বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তী। আর্জেন্টিনার হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৯১ ম্যাচে ৩৪টি গোল করেছেন। তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে ৪টি ফিফা বিশ্বকাপ (১৯৮২, ১৯৮৬, ১৯৯০ এবং ১৯৯৪) অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ২–১ গোলে জয়লাভ করার ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে মারাদোনার করা উভয় গোলই ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। প্রথম গোলটি ছিল হ্যান্ডবল, যা “হ্যান্ড অফ গড” নামে খ্যাত এবং দ্বিতীয় গোলটি মারাদোনা প্রায় ৬০ মিটার দূর থেকে ড্রিবলিং করে পাঁচজন ইংরেজ রক্ষণভাগের খেলোয়াড়কে পাশ কাটিয়ে করেন। যা কিনা শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।
১. পেলে - তিন বারের বিশ্বকাপ জয়ী একমাত্র ফুটবলার এডসন অ্যারেন্টস ডু নাসিমিন্টো ভি পেলে। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে ওয়েলসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে করা গোলটি ছিল বিশ্বকাপে পেলের প্রথম এবং সেই ম্যাচের একমাত্র গোল, যার সাহায্যে ব্রাজিল সেমিফাইনালে উত্তীর্ণ হয়। বিশ্বকাপের সবচেয়ে কনিষ্ঠতম ফুটবলার হিসেবে(বয়স ছিল ১৭ বছর ২৩৯ দিন) এই গোলটি করেছিলেন পেলে। ১৯৬২ সালে চিলি বিশ্বকাপ এবং ১৯৭০ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপও হাতে তোলেন পেলে। দেশের জার্সিতে ৯২ ম্যাচে ৭৭ টি গোল করেছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা, কারো কারো মতে সর্বকালের সেরা এই ফুটবল কিংবদন্তী।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন