১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপের আসর বসে উরুগুয়েতে। স্বাধীনতার শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ফিফা প্রেসিডেন্ট জুলে রিমে আয়োজকের দায়িত্ব তুলে দেন লাতিন আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের দেশটির হাতে। প্রথম তিন আসরের পর বিশ্ব জুড়ে দামামা বেজে ওঠে বিশ্বযুদ্ধের। ১৯৫০ সালে ফের বিশ্ববাসীকে এক সুতোয় বাঁধার জন্য আয়োজিত হয় বিশ্বকাপ।
এখনও পর্যন্ত মোট ২১ টি আসর বসেছে বিশ্বকাপের। কাতারে অনুষ্ঠিত হবে 'দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ'-এর ২২ তম সংস্করণ। ১৯৩০ সাল থেকে বিশ্বকাপ শুরু হলেও ব্যক্তিগত পুরষ্কারের প্রবর্তন হয় ১৯৮২ সালে। ফিফা ১৯৮২ সাল থেকে 'গোল্ডেন বল' ও 'গোল্ডেন বুট' পুরস্কার চালু করে। এরপর ১৯৯৪ সাল থেকে প্রয়াত কিংবদন্তী সোভিয়েত গোলকিপার লেভ ইয়াসিনের স্মরণে সেরা গোলরক্ষক পুরস্কারের প্রচলন করা হয়।
২০১০ সাল থেকে লেভ ইয়াসিন পুরস্কারের নাম বদলে গোল্ডেন গ্লাভস করা হলেও ফুটবল বিশ্বে এই পুরস্কার সোভিয়েত লিজেন্ডের নামেই পরিচিত। আজকের প্রতিবেদনে দেখে নেওয়া যাক, বিশ্বকাপের ইতিহাসে লেভ ইয়াসিন পুরস্কার বিজয়ী গোলকিপারদের সম্পর্কে-
১. ১৯৯৪: মিশেল প্রুডহোম, বেলজিয়াম:
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের গোলরক্ষক মাইকেল প্রুডহোম অবিস্মরণীয় প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো গোল্ডেন গ্লাভস তথা তৎকালীন 'ইয়াসিন এওয়ার্ড' জয় করেন। ১৯৯০ ও ১৯৯৪ সালে দেশের হয়ে দুটি বিশ্বকাপ খেলেছেন প্রুডহোম।
২. ১৯৯৮: ফেবিয়ান বার্থেজ, ফ্রান্স:
ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে গোল বারের নীচে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দাঁড়িয়েছিলেন বার্থেজ। পুরো টুর্নামেন্টে সাত ম্যাচ খেলে মাত্র দুইটি গোল হজম করেন তিনি। ক্লিন শিট ছিলো পাঁচটি ম্যাচে। কোয়ার্টার ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে পেনাল্টিও সেভ করেন তিনি। অবিশ্বাস্য সব সেভে ফুটবল বিশ্বকে '৯৮ বিশ্বকাপে চমকে দিয়েছিলেন এই ফরাসী গোলরক্ষক
৩. ২০০২: অলিভার কান, জার্মানি:
কানই প্রথম এবং একমাত্র ফুটবলার যিনি গোলকিপার হিসেবে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন। ২০০২ বিশ্বকাপে ভাঙাচোরা জার্মান দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালে। ফাইনাল না জিততে পারলেও টুর্নামেন্ট জুড়ে তাঁর পারফরম্যান্সে চমকে গিয়েছিল বিশ্ব। লেভ ইয়াসিন পুরস্কারের পাশাপাশি টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার গোল্ডেন বলও ওই বিশ্বকাপে জেতেন কান।পুরো টুর্নামেন্টে সাত ম্যাচ খেলে তিনি গোল হজম করেন মাত্র তিনটি। যার মধ্যে গ্রুপ পর্বে একটি এবং ফাইনালে দু'টি। ক্লিন শিট রেখেছিলেন পাঁচ ম্যাচে।
৪. ২০০৬: জিয়ানুলজি বুফন, ইতালি:
২০০৬ বিশ্বকাপে বুফনকে বোকা বানানো বিপক্ষ দলের কাছে ছিল একপ্রকার অসাধ্য সাধন করা। পুরো টুর্নামেন্টে সাত ম্যাচ খেলে মাত্র দুইটি গোল হজম করেন তিনি। রেকর্ড ৪৫৩ মিনিট গোলবার আগলে রেখেছিলেন বুফন। এই সময় তিনি কোনো গোল হজম করেননি। পুরো টুর্নামেন্টে ৪০টি অসাধারণ সেভ করেন। ইয়াসিন পুরস্কারের জন্য এই বিশ্বকাপে বুফনের কোনো বিকল্পই ছিল না।
৫. ২০১০: ইকার ক্যাসিয়াস, স্পেন:
দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপ থেকে 'ইয়াসিন পুরস্কার'-এর নাম বদলে করা হয় 'গোল্ডেন গ্লাভস'। বিশ্বকাপজয়ী স্প্যানিশ অধিনায়ক ইকার ক্যাসিয়াস জেতেন এই পুরস্কার। পুরো টুর্নামেন্টে মাত্র দুটি গোল হজম করেন তিনি। পাঁচ ম্যাচ ক্লিন শিট রেখেছিলেন। তাঁর অধিনায়কত্বেই স্পেন ২০১০ সালে ফিফা বিশ্বকাপ এবং ২০০৮ এবং ২০১২ সালে পরপর দুইবার ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়।
৬. ২০১৪: ম্যানুয়েল নূয়্যার, জার্মানি:
আর্জেন্টিনার সার্জিও রোমেরো ও কোস্টারিকার কেইলর নাভাসকে পেছনে ফেলে ব্রাজিল বিশ্বকাপে গোল্ডেন গ্লাভস জেতেন ম্যানুয়াল নূয়্যার। জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি।
৭. ২০১৮: থিবো কার্তোয়া, বেলজিয়াম:
প্রুডহোমের পর দ্বিতীয় বেলজিয়ান গোলরক্ষক হিসেবে বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত হন কার্তোয়া। রাশিয়া বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হলেও রিয়াল মাদ্রিদ তারকা থিবো কার্তোয়া দুর্দান্ত প্রদর্শন করেন টুর্নামেন্টে। রাশিয়া বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত হন তিনই।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন