মাত্র ১৮ বছর বয়সে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার সুযোগ পান এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গা। কার্লো আনচেলত্তির দলের হয়ে জিতেছেন উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ খেতাব। অল্প বয়সেই ইউরোপীয়ন ফুটবলে সাড়া জাগানো বছর ২০-এর কামাভিঙ্গা এবার জায়গা করে নিয়েছেন আসন্ন কাতার বিশ্বকাপের ফরাসী দলে। পল পোগবা, এন'গলো কন্তের অনুপস্থিতিতে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের মাঝমাঠের গুরু দায়িত্ব থাকবে তাঁর কাঁধেই। অথচ এই পর্যায়ে উঠে আসতে কামাভিঙ্গাকে পেরোতে হয়েছে অনেক বাধা। রিফিউজি ক্যাম্প বা শরণার্থী শিবির থেকে উঠে আসা কামাভিঙ্গার জীবনটা আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের মতো সহজ ছিল না। কাতার বিশ্বকাপে বল গড়ানোর আগে, জেনে নেওয়া যাক এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গার জীবন সংগ্রামের কিছু কথা।
২০০২ সালে কঙ্গোর যুদ্ধের সময় নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে কামাভিঙ্গার বাবা-মা পালিয়ে আশ্রয় নেন অ্যাঙ্গোলার শরণার্থী শিবিরে। কাবিন্দা নামের এক গ্রামে, শরণার্থী শিবিরেই ওই বছরের ১০ নভেম্বর জন্ম নেন কামাভিঙ্গা। কামাভিঙ্গার যখন দুই বছর বয়স, তখন তাঁর মা-বাবা তাঁকে নিয়ে চলে আসেন ফ্রান্সের ফোউগেরেস অঞ্চলে। এরপর এখানেই বড় হয়ে ওঠেন এই প্রতিভাবান সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার।
ফ্রান্সের সীমান্তবর্তী গ্রাম ফৌউগেরেসের নিকটবর্তী শহর রেনেসের দূরত্ব ছিল প্রায় ৫০ কিলোমিটার। এখানেই জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয় বালক কামাভিঙ্গার। মা সবসময়ই চাইতেন ছেলে যেনো খেলাধূলোতে এগিয়ে যান। তাই ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডের পাশাপাশি জুডোতেও প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন তাঁকে। তবে কামাভিঙ্গার ভাগ্য ছিল আরও উজ্জ্বল। সাত বছর বয়সে তাঁর বাবা যখন তাঁকে স্থানীয় ফুটবল একাডেমীতে নিয়ে যান, প্রথম দিনেই একাডেমীর কোচদের বিস্মৃত করে দেন তিনি। নিজের অসাধারণ দক্ষতায় আলো ছড়াতে থাকেন এই প্রতিভাবান ফুটবলার।
স্থানীয় লীগ ও বয়সভিত্তিক দলে নিয়মিত প্রদর্শন করে কামাভিঙ্গা নজর কাড়েন রেনেসের। ফ্রান্সের এই বিখ্যাত ক্লাব ট্রায়ালের জন্য ডেকে নেন তাঁকে। তবে এইসময়ই ঘটে এক বড় বিপত্তি। এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় তাঁদের একমাত্র বাড়ি। শূন্য হয়ে যায় তাঁদের পুঁজি। তবে সবাই হাল ছেড়ে দিলেও হাল ছাড়েননি তাঁর বাবা। নিয়মিত সাহস জুগিয়েছেন কামাভিঙ্গাকে।
রেনেসের হয়ে আলো ছড়ানোর পর কামাভিঙ্গা নজরে আসেন ফরাসী কিংবদন্তী জিনেদিন জিদানের। জিদান তখন রিয়াল মাদ্রিদ কোচ। ৩৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কামাভিঙ্গাকে রিয়াল মাদ্রিদে নিয়ে আসেন তিনি। এরপর সবারই জানা। বিশ্ব ফুটবল দাপিয়ে চলেছেন ২০ বছরের এই তরুণ তারকা।
রিয়াল মাদ্রিদে তাঁর দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স দেখে কাতার বিশ্বকাপের জন্য দলে নিতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশঁ। আসন্ন বিশ্বকাপে এই তরুণ ফরাসী মিডফিল্ডারের কাঁধে থাকবে বড় দায়িত্ব।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন