বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়াটা দক্ষিণ এশিয়ান দেশ গুলোর কাছে একপ্রকার স্বপ্নের মতো। দশ দিন পর কাতারে পর্দা উঠছে ফিফা বিশ্বকাপের ২২ তম সংস্করণের। এর আগে ২১ টি সংস্করণে সুযোগ পায়নি দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশই। কিন্তু সুযোগ এসেছিল। সুযোগ এসেছিল ভারতের হাত ধরেই। তবে ১৯৫০ বিশ্বকাপে সে সুযোগ পেয়েও হেলায় হাতছাড়া করে ভারত। তা না হলে হয়তো ফিফার মঞ্চে ভারতের স্থান অন্য জায়গায় থাকতো। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোর জন্যেও খুলে যেতে পারতো সুযোগের দরজা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিষাদগ্রস্ত, হতাশায় বুদ গোটা বিশ্বকে এক সুঁতোয় বাঁধার প্রয়াস ছিল ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপ। ফিফা সভাপতি হিসেবে জুলে রিমের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই আসর থেকে ফুটবল বিশ্বকাপের নামকরণ করা হয় ‘জুলে রিমে বিশ্বকাপ'। বিশ্বযুদ্ধের ধকল সহ্য করে তখনও ঠিক মতো দাঁড়াতে পারেনি ইউরোপ। বিশ্বকাপের আয়োজন করতে তাই অসম্মতি জানায় তারা। তবে আগ্রহ দেখায় ব্রাজিল। তাতেই রাজি হয়ে যায় ফিফা। ব্রাজিলকে দেওয়া হয় হোস্টিং রাইটস।
এই বিশ্বকাপেই সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল ভারত। অধিনায়ক শৈলেন মান্নার নেতৃত্বে টিম ইন্ডিয়া তখন দাপট দেখাচ্ছে। ফিফার তরফ থেকে জানানো হয় আগের আসরের শিরোপাজয়ী ইতালি ও স্বাগতিক ব্রাজিল ছাড়াও যেখানে অংশ নেবে ইউরোপের ৭টি, আমেরিকার ৬টি ও এশিয়ার ১টি দল৷ এশিয়া থেকে বাছাই পর্বের জন্য ফিলিপাইন, বার্মা, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ডাক পায় ভারত। কিন্তু ফিলিপাইন, বার্মা, ইন্দোনেশিয়া নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সরাসরি মূলপর্বে খেলার রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায় ভারতের।
ভারতকে নিয়ে ক্রীড়া সূচীও বানিয়ে ফেলে ফিফা। তবে এরপর দেখা যায় বিপত্তি। বিশ্বকাপের মাহাত্ম্য তখনও বুঝতে পারেনি এআইএফএফ কর্তারা৷ তাদের কাছে অলিম্পিক্সই ছিল সবকিছু। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্বকাপে অংশ না নেওয়ার। কারণ হিসেবে জানানো হয়, জাহাজ ভাড়া, অনুশীলনের সময় কম থাকা, বিদেশি মুদ্রার পরিমান কম থাকা এবং টানা সমুদ্রযাত্রা করে ব্রাজিলে যাওয়া৷ যদিও জানা যায়, আসল কারণ ছিল বুট পরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অনভ্যস্ততার কারণেই বিশ্বকাপে অংশ নিতে চায়নি ভারত। স্বাগতিক ব্রাজিল তখন প্রস্তাব দেয় পুরো খরচ বহন করার৷ কিন্তু তাতে সায় মেলেনি এআইএফএফ এর৷ ফলে বাধ্য হয়েই ১৩ দল নিয়েই বিশ্বকাপ আয়োজন করে তারা৷ ভারতের পাশাপাশি তুরস্ক এবং স্কটল্যান্ডও নাম প্রত্যাহার করে নেয়।
এতদিন অনেকে এই ঘটনাকে গল্পকথা বলে মনে করতেন। তবে সম্প্রতি প্রকাশিত বই, 'বক্স টু বক্স: ৭৫ ইয়ার্স অফ দ্য ইন্ডিয়ান ফুটবল টিম' শিরোনামের এই বইটিতেও লেখা হয়েছে এই বিষয়ে। 'ব্লান্ডার অফ দ্য সেঞ্চুরি' নামের এক অধ্যায়ে বইটির সম্পাদক প্রবীণ সাংবাদিক জয়দীপ বসুও এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট লিখেছেন, অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)-এর অজ্ঞতা, অদূরদর্শীতা, খেলোয়াড়দের প্রতি আস্থার অভাবের কারণে ভারত বিশ্বকাপে খেলার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ভারত আর একটা বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়, এটা দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে যাবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন