বিশ্বকাপ ফুটবলের মাঝেই এলো এক হাড় হিম করা সংবাদ। সরকার বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে ইরানের ফুটবলার আমির নাসর আজদানিকে। এই খবর সামনে আসার পরেই রীতিমত স্তম্ভিত ফুটবল বিশ্ব।
১৬ সেপ্টেম্বর ইরানে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে গোটা বিশ্বই অবগত হয়েছে। হিজাব ঠিক করে না পরার জন্য ইরানের ২২ বর্ষীয় তরুণী মাহশা আমিনীকে গ্রেফতার করে ইরানের নীতি পুলিশ। গ্রেফতারের দু'দিন পর রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় তাঁর। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে মাহশার। তবে তাঁর পরিবার তা মানতে চায়নি। এরপর থেকেই জ্বলছে ইরান। মাহশার মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তাল দেশ।
হিজাব বিতর্কে প্রতিবাদীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ইরানের ফুটবলাররাও। কাতার বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জাতীয় সঙ্গীতে গলা না মিলিয়ে সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন ইরানের ফুটবলাররা। 'নারী অধিকারের প্রচার'-এর জন্য সরকার বিরোধী বিক্ষোভে নামেন আমির নাসর আজদানিও। সেপ্টেম্বরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং গত ১৩ ডিসেম্বর তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছ।
২৬ বছর বয়সী ইরানি ফুটবলার আমির নাসর আজদানি জাতীয় যুব দলের হয়ে খেলেছেন। জাতীয় যুব দল ছাড়াও, তিনি রাহ-আহান তেহরান এফসি, ট্র্যাক্টর এসসি এবং গোল-ই রায়হানের মতো দলের হয়ে ইরানের প্রিমিয়ার লীগে খেলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তিনি ইরানের ইসফাহানে একটি "সশস্ত্র দাঙ্গায়" অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর তিন সদস্য নিহত হয়। তিনজনের মধ্যে দুইজন ছিলেন বাসিজের অন্যতম সদস্য (ইরানের সরকারি বাহিনী)। 'বিদ্রোহ, অবৈধ দলে সদস্যপদ, নিরাপত্তাকে ক্ষুণ্ন করার জন্য যোগসাজশ এবং তাই মোহারাবেহে (ঈশ্বরের বিরুদ্ধে শত্রুতা)' সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয় আজদানির বিপক্ষে।
আমির নাসর আজাদানির মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণায় হতবাক ফুটবল খেলোয়াড়দের ইউনিয়ন ফিফপ্রো। তারা নাসর আজাদানির শাস্তি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি করেছে। সোমবার ফিফপ্রোর অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে একটি বার্তায় বলা হয়েছে, "পেশাদার ফুটবলার আমির নাসর আজাদানি তাঁর দেশ ইরানে নারীর অধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার প্রচারণা চালানোয় মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হয়েছেন। ফিফপ্রো এমন খবরে হতবাক।"
ইসলামিক রিপাবলিক ইরান সোমবার জনসমক্ষে একজন ব্যক্তিকে ফাঁসি দিয়েছে। ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মানবাধিকার গ্রুপ HRANA অনুযায়ী, ইরানে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর সংখ্যা ৪৯৩-এ পৌঁছেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন