প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বড়ো দলের ম্যাচ থাকলে যত পুলিশ মোতায়েন করা হয় এদিন তার চেয়ে সংখ্যায় ঢের বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল সল্টলেকে। যদিও ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহামেডান স্পোর্টিং দলের সমর্থকদের দৃঢ়তার সামনে খড়কুটোর মত উড়ে গেল পুলিশি বাধা। বারবার ফুটবলপ্রেমীদের জমায়েতকে ভাঙার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে শেষমেষ থেমে যায় পুলিশ। শেষ কবে কলকাতা এইভাবে চির প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সমর্থকদের একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করতে দেখেছে তা মনে করতে কষ্ট করতে হবে।
বিকেল প্রায় চারটে থেকে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে এই খবর লেখার সময়েও সেই বিক্ষোভ চলছে। তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই তিন প্রধানের সমর্থকরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মুখে একটাই শ্লোগান – উই ওয়ান্ট জাস্টিস। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, ডার্বি বন্ধ করতে পারেন কিন্তু প্রতিবাদ বন্ধ করতে পারবেন না।
পুলিশি নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে শনিবার ডার্বি বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়। ফলে রবিবার ডুরান্ড কাপে ইষ্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগানের খেলা বাতিল হয়ে যায়। এই ঘটনাতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ফুটবলপ্রেমীরা। তখনই ডাক দেওয়া হয় রবিবার ম্যাচের সময় বিক্ষোভ দেখানো হবে যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সামনে। ফুটবলপ্রেমীদের অভিযোগ, গতকাল রাত থেকেই বিক্ষোভের উদ্যোক্তাদের ফোন করে বিক্ষোভ বাতিল করার কথা বলা হয়েছে পুলিশের তরফে।
রবিবার বিকেল চারটের আগে থেকেই ফুটবলপ্রেমীরা জড়ো হতে শুরু করে যুব ভারতীর আশেপাশে। যদিও তার আগে থেকেই এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেবার, ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করে যে পুলিশ লাঠি চার্জ করেছে, লাঠি উঁচিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ভাঙার চেষ্টা করেছে।
বার বার পুলিশি বাধার সামনে পড়লেও এদিন নিজেদের জায়গা থেকে নড়েননি বিক্ষোভকারীরা। একসময় পুলিশ দুই দলের কিছু সমর্থকদের আটক করে প্রিজন ভ্যানে তোলে। যদিও মুহূর্তের মধ্যে পুরো প্রিজন ভ্যান ঘিরে ধরে ফুটবলপ্রেমীরা। প্রবল বিক্ষোভের মুখে, একসময় আটক করা সমর্থকদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা বলেন, আজ আমাদের আটকাতে এত পুলিশ, কিন্তু সেদিন আর জি করে ভাঙচুরের সময় পুলিশের এই সক্রিয়তা কোথায় ছিল?
এদিন বিক্ষোভকারীদের মুখে বারবার উঠে আসে জাস্টিস ফর আর জি কর শ্লোগান। শ্লোগান ওঠে ‘তিন প্রধানের একই স্বর, জাস্টিস ফর আর জি কর’। বাঙ্গাল ঘটি একটি স্বর, জাস্টিস ফর আর জি কর। শোনা যায় দফা এক দাবি এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ শ্লোগানও।
এদিন এক বিক্ষোভকারী বলেন, আমরা সরকারকে পাঁচ গোল দিয়েছি। অন্য এক বিক্ষোভকারী বলেন, আসল দুর্গাকে হত্যা করে মাটির দুর্গা পুজোর জন্য ৮৫ হাজার কোটি টাকা দেবার কোনও মানে হয়না। অন্য এক বিক্ষোভকারী সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, যতক্ষণ না জাস্টিস পাবো ততক্ষণ আমরা এখান থেকে নড়বো না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন