চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা ঘুষ নেন। সেই টাকায় পকেট ভরে তোলাবাজদের। ওরা রাক্ষস, দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে বিজেপি এমনই ভিডিও বানিয়েছে । প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতের নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হল চিকিৎসক সংগঠন। নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে ওই ভিডিও আর প্রচারিত না হয়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনকেও এই চিঠি পাঠানো হয়। রাজ্যের সরকারি এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম টুইট করে নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং রাজনৈতিক দল বিজেপিকে উদ্দেশ্যে করে বলেছে, 'এক বছর আগে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীকে থালি, তালি বাজিয়ে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সংবর্ধনা জানানোর অনুরোধ করেছিলেন। সেই প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক দলই এখন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ঘুষখোর বলছে। লজ্জাজনক।'
কি আছে ওই ভিডিওতে? ওই ভিডিয়োর একটি চরিত্র বলে, অপু বেঁচে থাকলে আজ ওর বয়স হত পনেরো বছর। আমার স্পষ্ট মনে আছে, যখন আমি আমার রক্তাক্ত ছেলেটিকে কোলে নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছিলাম হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে, তখন ওয়ার্ড বয় থেকে ডাক্তার, সবাই আমার কাছে ঘুষ চেয়েছিল। কারণ তাঁরা সেই ঘুষের টাকা সংগ্রহ করে, তোলাবাজদের পকেট ভরত। ওরা এক একটা যে রাক্ষস, ওদের দুর্নীতি আমার ছেলেটাকে খেয়ে ফেলল।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের তরফে চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ, চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী এবং চিকিৎসক রাজীব পান্ডে যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, গত বছর কোভিডে দেশের লাখ লাখ মানুষকে বাঁচানোর জন্য হাজার হাজার চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এখন করোনার দ্বিতীয় ওয়েভে প্রবেশ করেছে দেশ। এখনও চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা ঝুঁকি নিয়েই মানুষকে বাঁচানোর জন্য লড়াই করে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারে একটি ভিডিও দেখে আমরা হতবাক হয়েছি। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি, এই ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাচ্ছি। সবার জন্য গুণমান সমৃদ্ধ চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থেকেছে, তারাই চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের বলির পাঁঠা করেছে।
ওই সংগঠনের আর এক চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন- গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ঘটনায় বিভিন্ন ভাবে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সফট টার্গেট করে, তাঁদেরকে আক্রমণ করা হয়েছে। এই সব ঘটনায় যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে পরিকল্পনা মাফিক অস্বীকার করেছে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শাসকদল। তাঁর মতে, এই ধরনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এরাজ্যের মানুষ প্রতিবাদে শামিল হবেন। আমাদের আরও বিশ্বাস, রাজনৈতিক দলগুলির শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন