নির্বাচনী ইস্তেহার মানে আগামী পাঁচ বছরে সরকার কী করবে আর কী করবে না, তার প্রতিশ্রুতি। গতকাল বুধবার তৃণমূল তাদের ইস্তেহার প্রকাশ করেছে। তাতে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সবটাই কল্পনা বলে মনে করছে বিরোধীরা। ইস্তেহারে দশটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে পরিবার পিছু ৫০০ টাকা এবং তপশিলি জাতি, উপজাতি পরিবারকে হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য, শিল্প, চাকরির ব্যবস্থা বা ক্যান্টিন-সহ আরও প্রায় দশটি প্রতিশ্রুতির উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু এখন বিরোধীদের প্রশ্ন, গত ১০ বছরে যেখানে টেট পরীক্ষা হয়েছে হাতে গোনা কয়েক বার, সঠিক পদ্ধতিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি টেট বা এসএসসিতে, সেখানে এই ধরনের প্রতিশ্রুতির মূল্য কতটুকু। তাই বিরোধীরা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি বলতেও পিছপা হচ্ছেন না। ২০১১ সালের ইস্তেহারে বলেছিলেন, বছরে ১০ লক্ষ বেকারের চাকরি দে্বেন। সেটা থেকে এখন কমে ৫ লক্ষ হয়ে গেল। এই তথ্য উল্লেখ করে ইস্তেহারকে ‘প্রতারণা’ বলে তোপ দেগে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তেহার- এই কথাটার কিছু মানে হয় না। ওরা ইস্তেহারে যা বলে সেই অনুযায়ী চলে না। এটা একটা প্রতারণার শামিল।' তিনি আরও বলেন- "এটা তো ভিক্ষা দেওয়া। মানুষ ভিক্ষা চায়নি, চেয়েছে অধিকার। ওরা তো ২০ টাকার পাউচ দিতে অভ্যস্ত। এটা মানুষ ভালো ভাবে নেবে না।" এবার বাড়িতে রেশন পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ইস্তেহারে। এসবই ভোট পাওয়ার জন্য উল্লেখ করে বলেন- "আমরা লকডাউনের সময় দুয়ারে রেশন পৌঁছে দেওয়ার জন্য চিঠি লিখেছিলাম। সরকার শোনেনি। লকডাউনের সময় জরুরি মনে হল না। এখন মনে করছে।"
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন- ‘‘তৃণমূল গত ১০ বছরে কত চাকরি দিয়েছে, তা আগে প্রকাশ করুক। তা হলেই পরিস্কার হয়ে যাবে এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবে কিনা।' বাংলায় কর্মসংস্থানের হাল লকডাউনের পরিযায়ী শ্রমিকদের দেখেই বোঝা গিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। ন্যূনতম মাসিক আয় সুনিশ্চিত করার বিষয় নিয়ে শমীক বলেন- 'ভোটের জন্য এই ভাঁওতা দেওয়া হচ্ছে। ভোট পাওয়ার জন্য এটা না করতেই পারতেন।' বিজেপি মুখপাত্রের কথায়, লকডাউনের সময় কেন্দ্রের পাঠানো ভালো চাল সরিয়ে খারাপ চাল দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের ইস্তাহারে বার্ধক্য ভাতা, তাজপুর বন্দর, বাংলা আবাস যোজনা, অশোকনগরে তেল উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। এ সবই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প বলে দাবি করেন শমীক। তিনি বলেন- "ইস্তেহারে যা ঘোষণা হয়েছে তা সবই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প। কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া একটিও পূরণ করা সম্ভব নয়।’ ইস্তেহারে শিল্পনীতি, জমিনীতি ও গত ১০ বছরে বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়নি বলে দাবি তাঁর।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন